Monday 28 May 2018

আপনি কি জানেন এক জন লুঠতরাজ কিভাবে হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদ্বি-আল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে গেলেন???

আপনি কি জানেন এক জন লুঠতরাজ কিভাবে হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদ্বি-আল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে গেলেন???
=================================

হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু | তাঁর নাম আবু আলী ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু . সমরকন্দে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রারম্ভে মাঠে-প্রান্তরে লুটতরাজ করতেন । ১৮৭ হিজরি সনে মক্কায় ওফাত লাভ করেন। জীবনের সূচনাপর্বে এক ব্যক্তি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেন:

 و ألم يأن للذين اموا أن تخشع قلوبهم لذكر الله في

" ঈমানদার জন্য কি এ সময় এখানাে আসেনি,তাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরের ভয়ে ঝুঁকে যাবে?"

এ আয়াতটি তার অন্তরকে এভাবে প্রভাবিত করল, যেন কেউ বর্শা নিক্ষেপ করল । তিনি অনুতাপ-অনুশােচনা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এই লুটতরাজের খেলতামাশা আর কতদিন চলবে! এখন ঐ সময় এসে গেছে, আমরা যেন আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে পড়ি। একথা বলে অঝাের ধারায় কাঁদতে লাগলেন। এরপর হতে রিয়াজত-মুহাদায় একাগ্র হয়ে গেলেন।

কারাে মতে, তার তাওবার কারণ এটি যে, তিনি একটি মেয়েকে ভালােবাসতেন। একবার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে তার কাছে যাচ্ছিলেন। (তখন) কানে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ আসল:

و ألم يأن للذين اموا أن تخشع قلوبهم لذكر الله في

‘"ঈমানদার জন্য কি এ সময় এখানাে আসেনি, তাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরের ভয়ে ঝুকে যাবে?"

এর উত্তরে তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! হ্যা, আমি এসে গেছি। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে একটি বিজন প্রান্তরে রাত কাটালেন। সেখানে কিছু মুসাফির ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন, এখান থেকে চলে যাও। তাদের মধ্য হতে কেউ কেউ বলল, এখানে সকাল পর্যন্ত থাকব। কারণ রাস্তায় ফুজাইল ইবনে আয়াজ থাকবে। সে লুটপাট করবে। তাদের কথার উত্তরে তিনি বললেন, সে তাওবা করেছে। অতঃপর তাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন । তিনি আল্লাহ ও নবীর অনুসরণ এবং তাকওয়া ও ইবাদতের রাস্তা অবলম্বন করলেন। রিয়াজত-মুশাহাদায় বড় কামালিয়ত অর্জন করলেন।

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, আমি নিজ কানে হযরত ফুজাইলকে একথা বলতে শুনেছি যে, দুনিয়া অনুসন্ধানীরা অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হয়। যখন আমি নিজের জন্য কিছু উপদেশের আরজ করলাম, তখন তিনি বললেন, খাদেম (সেবক) হও, মাখদুম (সেবা গ্রহণকারী) হয়ােনা। কেননা, খাদেম হওয়াই হচ্ছে সৌভাগ্যের কারণ । তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছে, সে নিজের পুরাে শক্তি-সামর্থ মতে আল্লাহর ইবাদত করে। কেননা তার পরিচয় তার অনুগ্রহ ও করুণার পরিচয় দ্বারা অর্জন হয় । যখন ঐ ব্যক্তি তাঁর করুণার-অনুগ্রহের সাথে পরিচয় হয়ে যায়, তখন সে তাকে বন্ধু বানিয়ে নেয় আর যখন বন্ধু বানিয়ে নেয়, তখন পুরাে সামর্থ ও শক্তি অনুযায়ী তার আনুগত্য ও ইবাদত পালন করে। কেননা বন্ধুর কোন কাজ কঠিন নয়। এ ভিত্তিতে যে পরিমাণ বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পাবে, সে পরিমাণ আনুগত্য ও ইবাদতের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পাবে আর বন্ধুত্বের প্রাবল্য হচ্ছে মারিফাতের হাকীকত।

 জনৈক কারী সাহেব তার সামনে খুবই চমৎকার কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করলেন। তখন তিনি বললেন, আমার বাচ্চাদের কাছে গিয়ে তেলাওয়াত করাে। কিন্তু সূরা আল-কারিয়া কখনাে পড়বেন না। কেননা, খােদাভীতির কারণে তারা কিয়ামতের আলােচনা শুনার শক্তি রাখেনা। কিন্তু কারী সাহেব সেখানে গিয়ে এ সূরাটি পড়লেন। তার সাহেবজাদা একটি চিৎকার দিলেন এবং দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন।

কথিত আছে যে, তাকে ৩০ বছর পর্যন্ত কেউ হাসতে দেখেনি। কিন্তু যখন তার প্রিয় সন্তান ইহকাল হতে বিদায় নিল, তখন মুচকি হাসি দিলেন । লােকেরা যখন হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করল, তিনি বললেন, আমি দেখেছি যে, আল্লাহ তা'আলা তার পরকালের দিকে যাত্রা দ্বারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। সুতরাং আমিও তার সন্তুষ্টিতে খুশি হয়েছি।

ফুজাইল ইবনে রবি বর্ণনা করেন যে, আমি হারুনুর রশিদের সাথে মক্কা মুকাররমায় উপস্থিত ছিলাম। হজ্বের কাজ সমাধা করার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কোন বুযর্গ ব্যক্তি আছে কিনা, যাতে তার সাক্ষাত লাভ করতে পারেন। (তৎকালীন যুগের লােকেরা মক্কা মুয়াজ্জমার মধ্যেও আহলুল্লাহদের অনুসন্ধানে থাকত।) আমি বললাম, হ্যা। সুতরাং আমি তাকে হযরত ফুজাইলের নিকট নিয়ে গেলাম। তখন তিনি নির্জনতায় বসেছিলেন। নিচে নেমে দরজা খুলে দয়ে প্রদীপ নিভিয়ে দিলেন এবং কক্ষে দণ্ডায়মান হয়ে গেলেন। হারুনুর রশিদ সরে চলে আসলেন। যখন হযরত ফুজাইলের হাত হারুনুর রশিদের হাত স্পর্শ করল, (ফুজাইল) তখন বললেন, ‘আফসােস! এরূপ তুলতুলে হাত আমি দেখিনি। এরূপ হাত যদি আল্লাহর আযাবে নিমজ্জিত হয়ে যায়, তাহলে খুবই তাজ্জবের পার। একথা শুনে হারুনুর রশিদের মধ্যে ভীতি ও বিনয়ভাব সৃষ্টি হল এবং তিনি এ পরিমাণ ক্রন্দন করলেন যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন । যখন সংজ্ঞা ফিরে আসেন তখন বলতে লাগলেন, হে ফুজাইল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। হযরত ফজাই বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন, তােমার পিতা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আবেদন করলেন যে, আমাকে নিজ সম্প্রদায়ের আমির বানিয়ে দিন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আমি তোমাকে তােমার প্রাণের আমির বানিয়ে দিয়েছি। কেননা, তােমার একটি মুহূর্ত আল্লাহর আনুগত্যে কাটিয়ে দেয়া এ বিষয়টি হতে উত্তম যে, লােকেরা হাজার বছরধরে তােমার আনুগত্য করবে। কেননা, কিয়ামতের দিন বাদশাহী ও আমিরী শুধু দুঃখ ও লজ্জা ছাড়া আর কিছু পাবেনা। অতঃপর হযরত ফুজাইল বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! কখনাে যেন এরকম না হয় যে, তােমার এই সুন্দর চেহারাটি দোযখের আগুনে পাকড়াও হয়ে যায়। অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখে এবং তারই হক উত্তম পন্থায় আদায় করাে। এরপর হারুনুর রশিদ বললেন, আপনার ওপর কিছু ঋণের বােঝা রয়েছে। তিনি বললেন, হ্যা, আল্লাহর ঋণ আমার গর্দানের ওপর রয়েছে আর তা হচ্ছে তার আনুগত্য আর যদি তিনি এর জন্য আমাকে পাকড়াও করেন, তাহলে তা হবে আমার জন্য দুর্ভাগ্য।

তিনি বলেন, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে লৌকিকতা হতে বাঁচতে পারেনা। আমরা এরূপ মানুষও দেখেছি, যে স্বীয় আমলে লৌকিকতা প্রদর্শন করে। কিন্তু এখন এরূপ মানুষও দেখা যাচ্ছে, যারা ঐ সব আমলের ব্যাপারে অহংকার করে, যা তারা করেও না। তিনি বলেন, আমি যখন দুনিয়াকে কারাে সাথে খেলা করতে দেখি, তখন আমার কান্না এসে যায়। যদি কুরআন-হাদীসের ধারক-বাহকরা দুনিয়া বিমুখতার ওপর ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে মানুষেরা তাকে অপমানিত মনে করেনা। কিন্তু আফসােস একথার ওপর যে, যখন কেউ বলে, অমুখ আলেম বা অমুখ আবেদ অমুখ ব্যবসায়ীর খরচে হজ্বে গেছেন । তিনি বলেন, যদি তােমরা কোন আলেম বা আবেদকে দেখ যে, তারা রাজাবাদশা বা দুনিয়াদারের নিকট নিজেদের প্রশংসা শুনে সন্তুষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বুঝে নাও যে, সে রিয়াকারী আর রিয়াকারীর একটি আলামত হচ্ছে যে, তার ইলম হবে। তাে পাহাড়সম, কিন্তু আমল হবে ধূলিকণাসম ।।

হযরত মালেক ইবনে দিনার রাদিআল্লাহু আনহু ও দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য ইবাদত,ও উপদেশ।
[[আমাদের জন্য নমুনাস্বরূপ যা থেকে শিক্ষা নিতে হবে]]
================================

হযরত মালেক ইবনে দিনারের তাওবার সূচনা এভাবে যে, একরাত তিন একটি গানের দলে গান বাজনার মাহফিলে উন্মত্ত ছিলেন। যখন সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন বেহালা হতে এ আওয়াজ বের হল, ?

يا مالك مالك الابتوب
 (হে মালেক তােমার কি হল, কতক্ষণ পর্যন্ত তাওবা না করে থাকবো?)
তখন তিনি পপিকার্য হতে বেরিয়ে আসলেন এবং ইমাম হাসান বসরীর দরবারে গিয়ে তাওবা করে নিজের অবস্থা সংশােধন করে নিলেন।

হযরত মালেক ইবনে দিনার দামেস্কে হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক নির্মিত মসজিদে ই'তিকাফ নিতেন। একদিন তার মনে আসল যে, এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যাক, এর দ্বারা আমাকে এই মসজিদের মুতাওয়ালি বানিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং তিনি ইতিকাফ নিলেন এবং সারা বছর এত অধিক পরিমাণ নামাজ পড়লেন যে, লােকেরা তাকে সর্বদা নামাজে ব্যস্ত দেখতেন । কিন্তু কেউ তার প্রতি মনােযােগ দিল না। একবছর পর যখন তিনি মসজিদ হতে বিদায় নিলেন, তখন গায়েব হতে আওয়াজ আসল, হে মালেক! এখন তোমাকে নিজ স্বার্থপরতা হতে তাওবা করতে হবে। সুতরাং একবছর পর্যন্ত নিজ স্বার্থপরতামূলক ইবাদতের ওপর খুবই দুঃখিত ও লজ্জিত হলেন । তিনি নিজ আত্মাকে লৌকিকতা ও স্বার্থ হতে মুক্ত করে একনিষ্ঠ নিয়তে একরাতে ইবাদত করলেন। সকালে দেখতে পেলেন যে, মসজিদের সামনে মানুষের একটি সমাবেশ হয়েছে, যারা পরস্পর বলাবলি করছে যে, মসজিদের ব্যবস্থাপনার কাজ ঠিক নেই। সুতরাং ঐ ব্যক্তিকে (মালেক) মসজিদের মুতাওয়াল্লি বানিয়ে দেয়া হোক। এই সিদ্ধান্তে সকলে ঐক্যমত হয়ে যখন তার নিকট গেল এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাকে অবগত করল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমি একবছর পর্যন্ত লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদতে এজন্যই নিমজ্জিত ছিলাম যে, মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব যেন আমার হাতে এসে যায়, কিন্তু তা পূর্ণ হয়নি। বর্তমানে যখন আমি সত্যদিলে তোমার ইবাদতে ব্যস্ত হয়েছি, তখন তোমার নির্দেশে সমস্ত লােকেরা আমাকে মুতাওয়ালি বানানোর জন্য এসেছে এবং কাঁধে এ দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করছে । কিন্তু তােমার মাহাত্মের শপথ করছি যে, আমি এখন না তাে মুতওয়ালির দায়িত্ব গ্রহণ করব, আর না মসজিদ থেকে বের হব। একথা বলে আবার ইবাদতে বিভাের হয়ে গেলেন।

খােদাভীতির এ অবস্থা ছিল যে, তিনি যখন ::
إياك نعبد وإياك نستعين
আয়াতটি নামাজে পড়তেন, তখন ব্যাকুল হয়ে ক্রন্দন করতেন এবং বলতেন যে, এটি যদি কুরআনের আয়াত না হত, তাহলে আমি তা কখনাে পড়তাম না। কেননা, এর অর্থ এটি যে, হে আল্লাহ, আমরা তােমারই ইবাদত করি এবং তােমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। অথচ আমরা তাে শুধু প্রবৃত্তির পূজারী এবং মানুষের নিকট হতে সাহায্যের প্রত্যাশী। তিনি বলেন, যার দ্বারা কিয়ামতের দিন কোন উপকার হবেনা, তার সাহচর্য দ্বারা কি লাভ। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, আলাহর প্রদত্ত তাকদীরের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও, যাতে তুমি হাশরের আযাব হতে মুক্তি পেতে পার।






No comments:

Post a Comment

Featured post

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজের বর্ননা।।

  সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম Madina Madina Madina   আমরা এই নামাজ কেন পড়ব?  কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে, অর্...