Saturday 23 June 2018

বিষয়ঃ---তাকলীদ সম্পর্কে ওহাবী,লা মাযহাবী দের উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর?

বিষয়ঃ---তাকলীদ সম্পর্কে ওহাবী,লা মাযহাবী দের উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর

উপস্থাপনায়ঃ--সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব

তাকলীদ সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর.....
তালীদের বিরােধীতাকারীদের উথাপিত আপত্তি সমূহ দু’ধরণের- কতগুলাে হচ্ছে অবান্তর, বাজে সমালােচনামূলক কিংবা বিদ্রুপাত্মক। এগুলাের উত্তরের প্রয়ােজন নেই। আর কতােগুলাে হচ্ছে প্রতারণামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে গায়র মুকাল্লিদগণ মাযহাবের অনুসারীগণকে ধোঁকা দিয়ে থাকে এবং সাধারণ মুকাল্লিদগণ তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে পড়ে। এ শেষােক্ত প্রশ্নগুলাের উত্তরসহ নিম্নে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলাে।

১নং আপত্তিঃ----তাকলীদ যদি একান্ত প্রয়ােজন হতাে, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম ( رضي الله عنه) কেন কারও তাকলীদ করেন নি? |

উত্তরঃ---সাহাবায়ে কিরাম ( رضي الله عنه) এর কারাে তাকলীদ করার প্রয়ােজন ছিল না। তাঁরা হযুর ﷺ সাহচর্য প্রাপ্ত হওয়ায় সমস্ত মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা বা ইমাম হিসেবে গণ্য। ফলস্বরূপ ইমাম আবুহানীফা (رحمة الله عليه) , শাফিঈ (رحمة الله عليه)  প্রমুখ। ধর্মীয় ইমামগণ তাঁদেরই অনুসরণ করেছিলেন।

 মিশকাত শরীফের "ফাযাইলুস সাহাবা” অধ্যায়ে আছে:
أصحابي كالنجوم بأيهم اقتديتم اهتديتم
. (অথ্যাৎ আমার সাহাবীগণ তারকারাজির মত। তােমরা যে কারাে অনুসরণ করা না কেন, সঠিক পথের সন্ধান পাবে।)
উল্লেখিত হাদীছ গ্রন্থের একই অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছেঃ-
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين
. অর্থাৎ-তোমরা আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নতকে আকড়ে ধর।

উথাপিত আপত্তিটার দৃষ্টান্ত হলাে, যেমন কেউ বলতে পারে আমরা কারাে উম্মত নই। কেননা আমাদের নবী ﷺ কারাে উম্মত ছিলেন না। সুতরাং উম্মত না হওয়াটা রসুল ﷺর সুন্নত। এর উত্তরে বলতে হবে-হুজুর ﷺ.. নিজেই নবী, সবাই তাঁর উম্মত। অতএব, তিনি কার উম্মত হবেন?

 তদ্রুপ সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হলেন সবার ইমাম। সুতরাং তাঁদের ইমাম আবার কে হবে?


 ঐ শষ্য ক্ষেতেই নদী-নালা থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, যার অবস্থান সাগর থেকে অনেক দুরে। মুকাবিরের তাকবীর শুনে ঐ সকল মুক্তাদীরাই নামায পড়েন, যারা ইমাম থেকে দুরে থাকেন। সাগর পাড়ের নিকটে অবস্থিত শষ্য ক্ষেতের জন্য নদী-নালার পানির প্রয়ােজন হয় না। আর প্রথম কাতারের মুক্তাদীগণের জন্য মুকাবিরের প্রয়ােজন পড়ে না। সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হচ্ছেন প্রথম কাতারের মুক্তাদী। তীরা কোন মাধ্যম ব্যতিরেকে সরাসরি হযুর ﷺ পবিত্র সিনা মুবারক থেকে ফয়েয প্রাপ্ত। আমরা যেহেতু ঐ সাগর (হযুরেরﷺ সিনা মুবারক) থেকে অনেক দুরে, সেহেতু আমাদেরকে খালের মুখাপেক্ষী হতে হয়। সাগর থেকে হাজার হাজার নদীর উৎপত্তি হয়, সে গুলােতে একই সাগরের পানি প্রবাহিত হয় বটে কিন্তু নাম ও গতিপথ ভিন্ন ভিন্ন। কোনটাকে গংগা, কোনটাকে যমুনা বলা হয়। অনুরূপ, হুযুর ﷺ হলেন রহমতের সাগর। তাঁর সিনা মুবারক থেকে যে নদী উৎপত্তি হয়ে ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله عليه) এর পবিত্র বক্ষ মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে হানাফী নামকরণ করা হয়েছে, আর যেটি ইমাম মালিক (رحمة الله عليه) এর সিনা মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে মালিকী মাযহাব বলা হয়েছে। সব নদীর পানি এক ও অভিন্ন, কেবল নাম ভিন্ন ভিন্ন। ঐ সব নদীর পানির প্রয়ােজন হয়েছে আমাদের, সাহাবায়ে কিরামের (رضي الله عنه) নয়। যেমন হাদীছের সনদ বা সূত্রের প্রয়ােজনীয়তা অনুভুত হয় আমাদের নিকট সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)এর নিকট উহার আদৌ প্রয়ােজন নেই।

২য় আপত্তিঃ---
 সঠিক পথের সন্ধানের জন্য কুরআন ও হাদীছই যথেষ্ট। কুরআন হাদীছে এমন কি বিষয় নেই, যার জন্য ফিকহের সাহায্য নিতে হবে? কুরআনেই ইরশাদ করা হয়েছেঃ
( وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ)
[Surat Al-An'am 59]
(আদ্র বা শুষ্ক এমন কোন কিছু বাকী নেই, যা ঐশীনূরে আলােকিত কুরআনের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়নি) আরও বলা হয়েছে।
(وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ)
[Surat Al-Qamar 17]
(আমি কুরআনকে শেখার বা স্মরণ রাখার বা মুখস্থ করার সুবিধার্থে সহজ করে দিয়েছি। স্মরণ করার কেউ আছে কি?)

এ আয়াত সমূহ থেকে বােঝা গেল, কুরআনের মধ্যে সব কিছু আছে এবং কুরআন প্রত্যেকের জন্য সহজ। তাই মুজতাহিদের নিকট যেতে হবে কি জন্য?

উত্তরঃ----
 হিদায়তের জন্য কুরআন ও হাদীছ নিঃসন্দেহে যথেষ্ট। এও ঠিক যে | কুরআন-হাদীছের মধ্যে সব কিছু আছে। কিন্তু এ থেকে মাসাইল বের করার উপযুক্ততা

থাকা চাই। সমুদ্রে অনেক মনিমুক্তা রয়েছে। এ গুলাে খুঁজে আনার জন্য ডুবুরীর প্রয়ােজন। ইমামগণ হলেন সমুদ্রের ডুবুরীর মত। চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থাবলীতে সব | কিছুর উল্লেখ আছে; তবুও আমাদেরকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, ব্যবস্থাপত্র নিতে হয়। ধর্মীয় ইমামগণই হলেন আমাদের ডাক্তার সদৃশ। আর কুরআনের আয়াত. (وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ)
[Surat Al-Qamar 17]
 এ বলা হয়েছে "কুরআনকে স্মরণ রাখার জন্য বা হিফজ করার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে;"

 মাসাইল বের করার ক্ষেত্রে সহজ করে দেয়া হয়নি।
 যদি মাসাইল বের করা এতাে সহজ হয়, তাহলে হাদীছের কি প্রয়ােজন থাকতে পারে? কুরআনের সবকিছু আছে আর কুরআন সহজও। তবুও কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী (দঃ) কেন এলেন? কুরআনেই আছে
 وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِم
[Surat Al-Baqarah 129]
(অর্থাৎ সেই নবী তাদেরকে আল্লাহর কালাম ও জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা দেন।)
 কুরআন ও হাদীছ হলাে রূহানী অষুধ, আর ইমাম হলেন রূহানী ডাক্তার।

৩য় আপত্তিঃ----- কুরআন শরীফে মাযহাবের অনুগামীদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ
[Surat At-Tawbah 31]
(ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পাদরী ও ঋষিদেরকে খােদা মেনে নিয়েছে) আরও বলা হয়েছেঃ
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ
[Surat An-Nisa' 59]
যদি তােমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে ঝগড়া-ঝাটি হয়, সেটার মীসাংসার জন্য আল্লাহ ও রসুল (আলাইহিস সালাম) এর শরণাপন্ন হও।।

আরও ইরশাদ করা হয়েছেঃ
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ
[Surat Al-An'am 153]

(এটাই হলাে আমার সরল পথ। এ পথেই চলল। অন্যান্য পথে চলিও না, অন্যান্য পথে গেলে এ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।)

আরও ইরশাদ করা হয়েছেঃ
قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا
[Surat Al-Baqarah 170]
(তারা বলে-আমরাতাে ওই পথেই চলবাে, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাদেরকে চলতে দেখেছি।)

এ সমস্ত আয়াত ও এ ধরণের অন্যান্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশের সামনে ইমামগণের নির্দেশ অনুযায়ী চলা কাফিরদেরই অনুসৃত পন্থা। সহজ সরল পথ একটিই। শাফেঈ, হানাফী, ইত্যাদি পথ চতুষ্টয় হলাে বাঁকা পথ।

উত্তরঃ------ কুরআন করীম যে তাকলীদের নিন্দা করেছে, সেই সম্পর্কে আমি এ গ্রন্থের ১ম অধ্যায়ে আলােচনা করেছি। কুরআনের -
(وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ )
[Surat Al-An'am 153]
আয়াত (অন্যান্য পথে চলিও না) দ্বারা ইহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ ইত্যাদি ইসলাম বিরােধী মতাদর্শকে বােঝানাে হয়েছে, আর হানাফী, শাফেঈ ইত্যাদি কয়েকটি পথ নয়, বরং একই ষ্টেশনগামী চারটি সড়ক বা একই নদী হতে উৎপন্ন চারটি খাল। তা না হলে গায়র মুকাল্লিদদের মধ্যে ছয়ী’ ও ‘গযনবী নামে যে দুটো দল রয়েছে, সে সম্পর্কে কি বলা হবে? ভিন্ন ভিন্ন পথের প্রশ্ন একমাত্র ‘আকাইদ বা বিশ্বাসের বিষয় বস্তু সমূহের পরিবর্তনের সহিত সম্পৃক্ত। চার মাযহাবের আকীদাহ এক। আমলের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের ব্যাপারটিও গৌণ। এ ধরণের মতভেদ স্বয়ং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও বিরাজমান ছিল।

Featured post

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজের বর্ননা।।

  সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম Madina Madina Madina   আমরা এই নামাজ কেন পড়ব?  কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে, অর্...