হযরত খাজা বাহা উদ্দিন নকশবন্দী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কে ছিলেন??
উপস্থাপনায় :-----সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব.
উপস্থাপনায় :-----সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব.
সুফি:---
সুফি শব্দটির দুইটি ব্যুৎপত্তি পাওয়া যায়। সাধারণভাবে, শব্দটির আভিধানিক অর্থ ṣafā (صفاء)এর থেকে এসেছে, যার আরবি অর্থ বিশুদ্ধতা বা পবিত্রতা বা শুদ্ধতা বা পাপশূণ্যতা । আরেকটি আরবি মূল পাওয়া যায়, যা পশম, ṣūf (صُوف), শব্দটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা করা হয়ে থাকে। পশম ছিল তৎকালীন মুসলিম তাপসদের সাধারণ পোশাক। সুফি আল-রুধাবারি এই দুইটি মূলকে একত্রিত করেছেন যিনি বলেন, "সুফি হলেন সে ব্যক্তি যিনি চরম পবিত্রতার বস্ত্র (পশমী) পরিধান করেন।" মুসলিম পন্ডিতরা একমত হয়েছেন যে, "সুফ" (ṣūf) বা পশমহল "সুফি" শব্দটির সম্ভাব্য মূল।
ইসলামী শাখা হিসেবে:---
সুফিবাদ হচ্ছে ইসলামের আধ্যাত্বিক-তাপসদের মরমীবাদ। এটি কোন সম্প্রদায় নয়,কোন আলাদা পথ না বরঞ্চ এটিকে মুল ইসলামিক ধারাবাহিক শিক্ষা যা নবী পাক সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম থেকে সাহাবা, সাহাবা থেকে তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, তার থেকে আইমায়ে মুজতাহিদ মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে, এখানে মুল বিবেচনা করা হয় যা মানুষের স্বীয় অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পর্কযুক্ত।মানুষের অন্তর কে পরিশুদ্ধ করে ইমানী জজ্ববা তৈরি করার ইসলামের আদি পদ্ধতি কে সুফী য়ানে কেরাম গন আজকে বহনকারী, ইনশাআল্লাহ এই পদ্ধতি কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।।
সুফিবাদঃ--
সুফিবাদ (সুফিবাদ বা সুফি দর্শন, আরবি- সুফিয়াত বা তাসাউফ) একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। সুফিবাদের একমাত্র মূল বিষয়টি হল, আপন নফসের সঙ্গে, নিজ প্রাণের সাথে, নিজের জীবাত্মার সাথে পরমাত্মা আল্লাহ যে শয়তানটিকে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছে তার সাথে জিহাদ করে তার থেকে মুক্ত হয়ে এ জড় জগত থেকে মুক্তি পাওয়া। আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনই হল এই দর্শনের মর্মকথা। পরম সত্তা মহান আল্লাহ কে জানার এবং আকাঙ্ক্ষা মানুষেরচিরন্তন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টাকে সুফি দর্শন বা সুফিবাদ বলা হয়।
হযরত ইমাম গাজ্জালি (রহমাতুল্লাহ আলাইহির) এর মতে,
আল্লাহর ব্যতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে প্রবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সুফিবাদ বলে।
‘সুফ অর্থ পশম আর তাসাওউফের অর্থ পশমী বস্ত্রে পরিধানের অভ্যাস (লাব্সু’স-সুফ) - অতঃপর মরমীতত্ত্বের সাধনায় কারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাওউফ। যিনি নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সুফি নামে অভিহিত হন।’
ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে অবিনশ্বর আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বুঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার, তাই তাঁর মধ্যে ফানা হওয়ার জন্য নিরাকার শক্তির প্রতি প্রেমই একমাত্র মাধ্যম। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী এই সাধনাকে ‘ তরিকত ’ বা আল্লাহ-প্রাপ্তির পথ বলা হয়। তরিকত সাধনায় মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন হয়। সেই পথ হলো ফানা ফিশ্শাইখ, ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সুফি দর্শন অনুযায়ী সুফি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সুফির অন্তরে সার্বক্ষণিক শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে।
সুফিগণের মতে, হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম)স্বয়ং সুফিদর্শনের প্রবর্তক।
হুজুর সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম এর আদ্ধাত্মীক জ্ঞানের দ্বারা সাহাবায়ে কেরম নিজের কে দুনিয়াতে তুলে ধরেছেন।।
হুজুর সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম এর আদ্ধাত্মীক জ্ঞানের দ্বারা সাহাবায়ে কেরম নিজের কে দুনিয়াতে তুলে ধরেছেন।।
সাহাবায়ে কেরাম থেকে সেই শিক্ষা তাবেঈন, ক্রমে তাবে তাবেঈন, আইমায়ে মুজতাহিদ থেকে বর্তমানে ক্রম বর্তমান।
এর সপক্ষে নুর নবী (সাল্লাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) এর একটি হাদিস উল্লেখ হল.....
মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে, আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়ে যায়। জেনে রাখো এটি হলো কল্ব বা হৃদয়।
বিঃদ্রঃ--- এছাড়াও বহু নমুনা পাওয়া যায় হাদীসের কিতাব থেকে যার দ্বারা হুজুর সাল্লালাহুতায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম কে তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে ছেন সেই শিক্ষার দ্বারা সাহাবায়ে কেয়াম এক এক জন দর্শনের সেই স্থানে পৌছে গিয়েছিলেন যার জন্য হুজুর সাল্লালাহু তায়ালা আলালাইহি ওসাল্লাম আবারো ইরশাদ করেন.......
আমার সাহাবায়ে কেরাম হলেন আকাশের উজ্জ্বলিত তারোকা,আর আমার আহালে বাইয়াত হল নুহ আলাইহিসালাম এর সাফিনা(নৌকা),।।
আমাদের নমুনা সাহাবা, ও আহলে বাইয়াত কে অনুযায়ী নিজের আধ্যাত্মিক জ্ঞান কে প্রসারিত করতে থাকলে ইনশাআল্লাহ উম্মতে মোহাম্মাদ কোনো দিন পথভ্রষ্ট হবেনা ইনশাআল্লাহ।।
আল্লাহর জিকর বা স্মরণে কল্ব কলুষমুক্ত হয়। সার্বক্ষণিক আল্লাহরস্মরণের মাধ্যমে কল্বকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেমার্জন সুফিবাদের উদ্দেশ্য। যাঁরা তাঁর প্রেমার্জন করেছেন, তাঁদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করাই হলো সুফিদর্শন।
যারা সেই প্রেমাজন করতে সক্ষম তাদের কে অনুসরণ করার জন্য আল্লাহতালা হুকুম দিয়েছেন পবিত্র কোরআন শরিফের মধ্যে......
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
Ihdina alssirata almustaqeema
“আমাদের তুমি সহজ-সঠিক পথে পরিচালিত করো"
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
SIRAATAL LAZINA AN`AMTA `ALAYHIM; GHAYRILMAGHDOOBI `ALAYHIM WALADDAALEEN.
“তাদের পথে যাদের প্রতি তুমি নিয়ামত অর্পণ করেছ, তাদের ব্যতীত যাদের প্রতি গযব এসেছে, এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।"
এই আয়াতুল্লাহ দ্বারা পানীর মতো স্বচ্ছ হয়েগেল যে আল্লাহতালা তাদের পথে নিজের জীবন কে পরিচালনাকারী হতে বলছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
সুফিবাদ উৎকর্ষ লাভ করে পারস্যে। সেখানকার প্রখ্যাত সুফি-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকগণ নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এই দর্শনকে সাধারণের নিকট জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত ওলিদের অবলম্বন করে নানা তরিকা গড়ে ওঠে। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি প্রধান তরিকা (পথ) সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে:---
(১)গাউসুল আজম বড় পির হযরত আবদুল কাদির জিলানি (রহমাতুল্লাহ আলাই.) প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া তরিকা,
(২)সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মু’ঈনুদ্দিন চিশতি (রহমাতুল্লাহ আলাই)প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা,
(৩)হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (রহমাতুল্লাহ আলাই) প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা এবং
(৪)হযরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদ-ই-আলফে সানি সারহিন্দি (রহমাতুল্লাহ আলাই.) প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দিদিয়া তরিকা।
এছাড়া সুহ্রাওয়ার্দিয়া, নিজামী,আত্তারী,আক্তারী,রেজভী,নুরী, আহমদিয়া ও কলন্দরিয়া,ইত্যাদি ইত্যাদি নামে মুল তরিকার বিভিন্ন শাখামূল ভাগ বর্তমান।।
সেই তরিকতের মনাহ চার ইমামের এক জন হলে খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দি রহমাতুল্লাহ আলাই।আমরা এখন উনার সংক্ষিপ্ত জীবনের উপর আলোচনা করি.....
مفلسانیم آمده در کوے تو
شيئا لله از جمال روے تو
অর্থাৎ----
"অসহায় নিঃস্ব এসেছি তােমার গলিতে
তােমার চেহারার শােভা হতে আল্লাহর জ্যোতি নীতি।"
তিনি বলেন, উম্মত তিন ধরনের:--
এক. উম্মতে দাওয়াত অর্থাৎ সকল মানুষ মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে।
দুই. উম্মতে এজাবত অর্থাৎ মুসলমান।
তিন. উম্মতে মুতাবাআত যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ অনুসারী।
একদিন কেউ তার নিকট কারামত তলব করল। তিনি বললেন, আমার কারামত এটি যে, পাপী হওয়া সত্ত্বেও না তাে জমিন আমাকে উগরে ফেলেছে আর
আসমান হতে আযাব নাযিল হয়। কেউ তাকে জনাকীর্ণ পরিবেশে খিলওয়াত (নির্জনতার) মর্মার্থ জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, দৃশ্যতঃ মাখলুকের সাথে হওয়া এবং অন্তরের দিক দিয়ে আল্লাহর সাথে হওয়া। ঐ ব্যক্তি বলল, এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি বললেন, আল্লাহর বাণী রয়েছে,
. رجال لا تلهيهم تجرة ولا بيع عن ذكر الله
"এমন লােকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না।"
(আল-কুরআন, সূরা নূর, আয়াত : ৩১)
বুখারায় জনৈক আলেম তাকে জিজ্ঞাসা করল, নামাজে হুজরী কীভাবে অর্জন হয়? তিনি বললেন, হালাল খাদ্য দ্বারা যা যাচাই-বাচাই ও সাবধানতার সাথে ভক্ষণ করা হয় আর এর দ্বারা সমস্ত সময়ে বিশেষ করে নামাজে হুজুরী অর্জন হয় ।
তিনি আল্লাহর মা'রিফাতের রাস্তায় স্বয়ং মানব সত্তাকে বড় আড়াল হওয়ার ব্যাপারে বলেন, তােমার পর্দা বা আড়াল তােমার সত্তা।
دع نفسك وتعال
(স্বীয় নফসকে দরজায় ছেড়ে দাও এবং আল্লাহর মা'রিফাতে ডুব দাও ।)
মন্দলােকের সান্নিধ্য হতে বেঁচে থাকার ব্যাপারে বলেন, যে ব্যক্তির যােগ্যতার প্রতিভা মন্দলােকদের সঙ্গ দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে, তার অবস্থা সংশােধন করা কঠিন। তবে চিন্তাশীলদের সুহবত, যারা খুবই বিরল।
একদিন তিনি বলেন, ইস্তিকামতের (দৃঢ়পদী) তালেব হয়ে কারামতের তালেব হয়ােনা। কেননা, তােমার প্রতিপালক তােমার নিকট হতে ইস্তিকামত তলব করেন আর তােমার নফস তােমার নিকট হতে কারামত তলব করেন।
তাকে সেমা (আধ্যাত্মিক সংগীত) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি তা অস্বীকারও করিনা, আর না তা করে থাকি।
তিনি বলেন, আমাদের তরীকত হচ্ছে আদবের ওপর ভিত্তি।
তরীকত পন্থীদের জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে আদব । আদবের তিনটি প্রকার রয়েছে।
এক প্রকার আদব আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পর্কীত।
দ্বিতীয় প্রকার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এবং
তৃতীয় প্রকার তরীকতের মশায়েখদের সাথে।
আল্লাহ তা'আলার আদব এই যে, যাহের-বাতেন বান্দা পূর্ণাঙ্গ বন্দেগীর শর্তে তার বিধানাবলী পালন করবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল কিছু হতে সম্পূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আদব এই যে, তাঁর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ ও অনুকরণ করবে আর সকল অবস্থায় তার হকসমূহকে চোখের সামনে রাখবে। তাকে সকল সৃষ্টিজগত ও আল্লাহর মধ্যে সম্বন্ধকারী মনে করব। যে যত মহান হােক না কেন, তার মাথা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইজ্জত-আলয়ের সামনে অবনর্মিত।
| তৃতীয় আদব তরীকদের মশায়েখদের সাথে। তালেবদের জন্য আবশ্যক। যে, ঐ সকল মশায়েখ, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে, তাদের আদবকে সর্বাবস্থায় ওয়াজিব মনে করবে।
একদিন তিনি বলেন, যিকিরের উদ্দেশ্য এই যে, যিকিরকারী কলেমায়ে তাওহীদের হাকীকতকে পেয়ে নিবে আর এর হাকীকত এই যে, কলেমা পাঠকারা। আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল বস্তু হতে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কহীন ও মুক্ত হয়ে যাবে।
একদিন তিনি মক্কায় দুইজন ব্যক্তিকে দেখলেন। তাদের মধ্যে একজন বই সাহসা এবং আরেকজন খুবই কাপুরুষ ছিল। কাপুরুষ ছিল ঐ ব্যক্তি, যাকে আমি তাওয়াফ করতে দেখেছি। অতঃপর ঐ ব্যক্তি খানায়ে কাবায় হাত রেখে আল্লাহ ছাড়া অন্য বস্তুর জন্য প্রার্থনা করছে।
আর উঁচু সাহসী ছিল ঐ যুবক, যাকে আমি মিনার বাজারে পঁচিশ হাজার দিরহামের লেনদেন করতে দেখেছি। কিন্তু তখন এক মুহূর্তের জন্যও তার অন্তর আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত হয়নি।
আরেফদেরকে সফলতার সাথে মঞ্জিলে মাকসুদের পথনির্দেশ করতে গিয়ে বলেন, ঐ রাস্তা, যার মাধ্যমে আরেফরা প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পেয়ে নেয় এবং অন্যরা বঞ্চিত থাকে, তা তিনটি। মুরাকাবা, মুশাহাদ ও মুহাসাবা।
আল্লাহর দিকে সর্বদা দৃষ্টি দেয়া এবং মাখলুক হতে অমনােযােগী হওয়াকে মুরাকাবা বলা হয়। অর্থাৎ তরীকত পন্থীদের উচিত, তারা সর্বদা আল্লাহর সত্তার দিকে মনােনিবেশ করবে এবং মাখলুকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে । যখন মুশাহাদা দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল গায়বী বিষয়বস্তুর প্রত্যক্ষ লাভ, যা অন্তরে অবতারিত হয় । আগত জিনিস দ্রুত চলে যায় । স্থির থাকেনা। অতএব তা আমরা বুঝতে পারিনা। তবে গুণাবলীর প্রসারণ ও সংকোচন দ্বারা এটি অনুমান হয়ে যায়। কজের মধ্যে সিফাতে জালালের (মাহাত্ম) মুশাহাদা করানাে হয় এবং বসতের মধ্যে সিফাতে জামালের সৌন্দর্য)।
মুহাসাবা এই যে, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের ওপর যা কিছু ঘটে যায়, তা পরখ করে দেখানাে। তাতে কি গাফলতী করেছি নাকি হুজুরী করেছি। যদি পুরােপুরিভাবে ক্ষতি হয়, তাহলে চিন্তা করব এবং আমলকে নতুনভাবে শুরু করব। কামিয়াবীর সীমাবদ্ধতা এই পথের পথিক হওয়ার মধ্যেই।
aminultkg924@gmail.com
ReplyDelete01701587924
ReplyDelete