বিষয়ঃ--- মুসলমান ও বেকারত্ব
সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব(পশ্চিমবঙ্গ)
সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব(পশ্চিমবঙ্গ)
[[বড় লেখা ধৈর্য সহকারে পড়ুন ইনশাআল্লাহ জীবনের নতুন দিশা পাবেন।।মতামত জানাবেন।।]]
বেকারত্ব কি?
বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। ইংরেজি তে আনএমপ্লোয়মেন্ট (Unemployment) শব্দটি থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুজে পায় না তখন যে পরিস্থিতির হয় তাকে বেকারত্ব বলে।
বেকারত্বের ধরণ ও প্রকারভেদ:--
দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সামাজিক অবকাঠামো, বেকারত্বের সংজ্ঞা, কারণ ও বৈশিষ্ট্যের বিচারে বেকারত্ব বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত দুর্বলতার ফলে সৃষ্টি হয় অবকাঠামোগত বেকারত্ব। হঠাৎ কোনো মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা স্থানান্তরের ফলে আকস্মিক বেকারত্বের সৃষ্টি হয়। কারিগরি বা প্রযুক্তিগত অপর্যাপ্ততার দরুণ বেকার সমস্যা তৈরি হয়। তৈরি পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য মৌসুমি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা দেয় মৌসুমি বেকারত্ব। আবার কাজের ধরণের সঙ্গে শ্রমশক্তির দক্ষতার অসঙ্গতির ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরণের বেকারত্ব।
পশ্চিমবঙ্গ ও বেকারত্বঃ--
দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। স্বল্প শিক্ষিতের পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষিত কর্মহীনের সংখ্যাও বাড়ছে। সেই সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে কর্মসংস্থানের পরিধি। ইঞ্জিনিয়ারিং ও এম বি এ, বি এস সি, এর মতো সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ঘুরছেন বেকারত্ব নিয়ে। দেশে স্বল্প শিক্ষিত ও মধ্যম শিক্ষিতের কর্মসংস্থানে যে সংকট, প্রায় তার অনুরূপ সংকট উচ্চ শিক্ষিতের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও। কারণ একটাই অর্থাৎ তাদের সংখ্যা বাড়লেও চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণ ঘটছে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি খাতে বরাদ্দের অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এক সমীক্ষা বলছে, ভারতে চাকরির বাজার ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। আর এর ফলে ২০১৭ এবং আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতে বেকারত্ব বাড়বে বলেই মনে করছে ওই সমীক্ষা। ফলে নতুন প্রজন্মের কপালে চিন্তার ভাঁজ এই সমীক্ষা আরও বাড়বে বলেই মত ওয়াকিবহালমহলের। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে বেকারত্বের হার।
এতোক্ষন আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম সংক্ষিপ্ত ভাবে বেকারত্ব ও তার কারন।। এবারে তুলে ধরবো মুসলিম সমাজের বেকারত্ব কেন??কি জন্য??কি কারনে মুসলিম সমাজ অবহেলিত??ইসলামিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে বেকারত্ব??
ইসলামের নির্দেশ হল-
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“ অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরাপৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়(রুজিরোজগার অন্বেষনে) এবং আল্লাহর করুনা ভাণ্ডার থেকে অনুগ্রহ তালাশ কর ওআল্লাহকে অধিক স্মরন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও(সূরাজুমুয়াহঃ১০)।
“ অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরাপৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়(রুজিরোজগার অন্বেষনে) এবং আল্লাহর করুনা ভাণ্ডার থেকে অনুগ্রহ তালাশ কর ওআল্লাহকে অধিক স্মরন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও(সূরাজুমুয়াহঃ১০)।
আয়াতে উল্লিখিত “ফযল(অনুগ্রহ)” শব্দটিকে গভীরমনযোগের সাথে বুঝতে হবে। এ শব্দটির মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালা কি
বোঝাতে চাচেছন? এখানে গভেষনার অন্তর চক্ষখুলে দিন!তবেই বুঝবেন “ফযল(অনুগ্রহ)” দ্বারা আল্লাহর
উদ্দেশ্য হল কর্মক্ষেত্রতৈরী করার জন্য যত গুলো উপকরন বা নিয়ামতের প্রয়োজন
সবকিছুর যোগান তিনি পূর্বে থেকেই তৈরী করে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। এখন মানুষের কর্তব্য হল বেকার না থেকে কর্মের মাধ্যমে এই উপকরন গুলো একত্রিত করে একটি কার্যকারনে পরিনত করা। এ স্থানে আল্লাহ তায়ালা মানুষের কর্ম গুলোকে পুরোপুরি সৃজনশীলতা ও অধ্যবসায়ের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। যে তার কর্মে যতটুকুন মনযোগী ও শ্রম দিবে সে ততটুকুই সফল হবে। আর তাই খোদা প্রদত্ত মেধা কাজে লাগিয়ে
আজ যতই মহাকাশে উড্ডয়ন করুক, দুরারোগ্য ব্যাধির
প্রতিষেধক এবংচিকিৎসা আবিস্কার হউক,
বিশাল বিশাল শিল্প কারখানা নির্মান,প্রযুক্তির
বিস্ময়কর ইন্টারনেটের আবিস্কার, গগন চুম্বি
সুরম্যঅট্রালিকা দেখে অত্যাচর্য হবার কিছুই নেই। বরং ভবিষ্যতে আরওঅনেক আল্ট্রা(অত্যাধুনিক) অবিস্কার অপেক্ষা করছে এটাই স্বাভাবিক। যা আল্লাহই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। শুধু আমার আর আপনার বেকারত্ব গুছিয়ে কর্মে নেমে পড়ার অপেক্ষা। ফযল(অনুগ্রহ)এর সদ্যব্যবহার করতে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া, ইহা আল্লাহর নির্দেশ।কাজেই আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে সম্পদ
অর্জনের লক্ষে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া মুমিনের সর্বোত্তম ইবাদত।
আল্লাহতালা হুকুম ও নবী গনের কর্মজীবনঃ---
শুধুমাত্র আল্লাহর প্রেরিতমহান নবী ও
রাসূলগনের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা
যাবে তাদের প্রত্যেকের জীবন পরিচালনা ছিল
বর্তমান চিত্রের সম্পুর্ন বিপরীত। তারা সকলেই নবুয়তের মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মে লিপ্ত হতেন।
হযরত আদম (আলাইহিসালাম)পৃথিবীতে
অবতরনের পর জীবিকা নির্বাহের জন্য হযরত জিব্রাঈলআমীন এর নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি উত্তরে বললেন- হে আদম!তুমি যদি নিজস্ব প্রয়োজন মিটাতে চাও তাহলে কৃষি কাজের অনুবর্তী হও।
অবতরনের পর জীবিকা নির্বাহের জন্য হযরত জিব্রাঈলআমীন এর নিকট পরামর্শ চাইলে তিনি উত্তরে বললেন- হে আদম!তুমি যদি নিজস্ব প্রয়োজন মিটাতে চাও তাহলে কৃষি কাজের অনুবর্তী হও।
হযরত নূহ (আলাইহিসালাম) দীর্ঘ নয়শত
পন্ঞ্চাশ বছর যাবৎ কাঠমিস্ত্রির পেশায় নিয়োজিত থেকে দাওয়াতি কাজ করেন।
পন্ঞ্চাশ বছর যাবৎ কাঠমিস্ত্রির পেশায় নিয়োজিত থেকে দাওয়াতি কাজ করেন।
একই ভাবে
হযরত দাউদ (আলাইহিসালাম) খেজুর গাছের পাতা
দিয়ে জাম্বিল বানিয়ে তা বাজারে বিক্রি করতেন।
দিয়ে জাম্বিল বানিয়ে তা বাজারে বিক্রি করতেন।
হযরত মূসা (আলাইহিসালাম) হযরত শোয়াইব
(আলাইহিসালাম) এর দশবছর রাখাল বৃত্তি
করেছিলেন।
(আলাইহিসালাম) এর দশবছর রাখাল বৃত্তি
করেছিলেন।
হযরত ঈসা (আলাইহিসালাম) কে একজন
জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের মাঝে কে উত্তম? তিনি বললেন যেপরিশ্রম করে নিজের রোজ
কারের টাকায় খাবার গ্রহন করে।
জিজ্ঞেস করেছিল আমাদের মাঝে কে উত্তম? তিনি বললেন যেপরিশ্রম করে নিজের রোজ
কারের টাকায় খাবার গ্রহন করে।
আর আমাদের প্রিয় নবিজী (আলাইহিসালাম) তো
স্বয়ং শৈশবে রাখাল বৃত্তি করেছেন,যৌবনে
সিরিয়া সহ বিভিন্ন শহরে ব্যবসার কাজে
নিয়োজিত ছিলেন।
স্বয়ং শৈশবে রাখাল বৃত্তি করেছেন,যৌবনে
সিরিয়া সহ বিভিন্ন শহরে ব্যবসার কাজে
নিয়োজিত ছিলেন।
এমন কি রাসুল (সাল্লালাহু তায়ালা আলাইহি ওসাল্লাম) বলেছেন- “ শ্রমিক আল্লাহর বন্ধু শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে পার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও"।।
এখন লক্ষ্যের বিষয় যে আজকের মুসলিম সমাজের মাঝে কি এই নিদর্শন আছে??কেউ ধর্ম কে ধরতে গিয়ে কর্ম কে ছেড়েছে, বা কেউ কর্ম কে ধরতে গিয়ে ধর্ম কে ছেড়েছে।
বেকারত্বের প্রভাব মুসলিম সমাজের উপরঃ---
মুসলমানদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ হলাে বেকারত্ব ও অকর্মন্যতা। বেকারত্বের কারণে অভাবগ্রস্থ, অভাবগ্রস্থের কারণে ঋণগ্রস্ত এবং ঋণগ্রস্তের কারণে হতে হয় অপদস্ত। অভাবগ্রস্ততা অনেক অপরাধের মূল। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মস্তানি ইত্যাদি প্রধানতঃ বেকারত্ব ও অভাব গ্রস্তের কারণেই হয়ে থাকে। দারিদ্রের হার মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী। নির্লজ্জের মত যেখানে সেখানে হাত পাততে দ্বিধাবােধ করে না। অনেক ধর্ম ব্যবসায়ী পেশাদার ওয়ারেজকে দেখা যায়, ওয়াজ করার পর শ্রোতাদের কে বলে-ভাইগণ আমি একজন গরীব লােক, আমাকে সাহায্য করুন। এ দু'টি শব্দে সম্পূর্ণ ওয়াজ বেকার হয়ে যায়। অভাবের কারণে নামায-রােযা ইত্যাদি ইবাদতের ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
غم اهل وعیال وجامه وقتی بازت أرد زسیر در ملکوت!
شب چو عقد نماز بر بندم چه خورد بامداد فسر زندمم
و
অর্থাৎ "স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণ পােষণের চিন্তা ইবাদত কারীকে আধ্যাত্মিক জগতের ভ্রমণ থেকে টেনে নিচে নিয়ে আসে। নামাযের নিয়ত বাঁধা মাত্রই স্মরণ হয় যে কাল সকালে ছেলেরা কি খাবে"।
এজন্য বেকারত্বের অবসান ঘটানাে এবং নিজ নিজ ছেলে দের কে বখাটে হওয়া থেকে রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উচিত। যুবকদের কে যে কোন কাজে নিয়ােজিত রাখা উচিত। অন্যান্য জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। হিন্দুদের ছােট ছেলেমেয়েদেরকে হয়তাে স্কুল-কলেজে অথবা রাস্তাঘাটে ছােটখাট জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যায়। মুসলমানের ছেলেদেরকে হয়তাে ঘুড়ি উড়াতে অথবা অন্যান্য খেলাধুলায় ব্যস্ত দেখা যায়। অন্যান্য জাতির যুবকদেরকে অফিস-আদালতের বিভিন্ন চেয়ারে বা ব্যবসায় ব্যস্ত দেখা যায়। কিন্তু মুসলমানের যুবকদেরকে ফ্যাশন বিলাসিতা ইত্যাদিতে মগ্ন অথবা চাঁদাবাজি, মস্তানি ইত্যাদি কাজে দেখা যায়। রংবাজি, ধোঁকাবাজি, খুন-খারাবি, ছিনতাই,মােট কথা অধঃপতনের সব গুণ মুসলমান জাতির মধ্যে পুঞ্জিভূত হয়েছে। মদখাের, জুয়াড়ী, সন্ত্রাসী ইত্যাদির মধ্যে অধিকাংশ মুসলমান। আফসােস, যে দ্বীন অসৎ-বদমাইশ দেরকে দুনিয়া থেকে বিতাড়িত করতে এসেছে, সে দ্বীনের অনুসারীরা আজ বদমাইশদের মধ্যে ১ম স্থান অধিকারী।
এত কিছুর পরও আমাদের টিকে থাকা ও আমাদের উপর আল্লাহর গজব না আসার একমাত্র কারণ হলাে আমরা হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতাআলা ফরমায়েছেনঃ
وما كان الله ليعذبهم وانت فيهم
(অর্থাৎ হে মাহবুব, আপনি ওদের মধ্যে যতক্ষণ আছেন, আল্লাহর কাজ নয়। যে ওদের প্রতি আজাব নাযিল করা)।
তা নাহলে আমাদের পরিণতি খুবই মারাত্মক হতাে। আগের উম্মত গুলােকে যে ধ্বংস করা হয়েছিল, তা মাত্র এক একটি অপরাধের কারণে যেমন শুয়াইব আলাইহিস সালামের উম্মত ওজনে কম দেওয়ার কারণে, লুত আলাইহিস সালামের উম্মত হারাম কাজের কারণে ওদের প্রতি খােদার গজব নাযিল হয়েছিল। কিন্তু আমরা এমন সব কাজ করিতেছি, যা ওদের বাপ দাদারা কল্পনাও করেনি। দুধ থেকে ননী বের করে নেয়া, ডালডাকে খাঁটি গাওয়া ঘিতে পরিণত করা, সরিষার তৈলের সাথে সয়াবিন তৈল মিশ্রিত করা, দেশী কাপড়কে বিদেশী সীল মেরে বিক্রি করা, মােট কথা যত জালিয়াতি আছে, সব ব্যাপারে আমরা পটু। এখনও সময় আছে, সতর্ক হয়ে যান। অনতি বিলম্বে এসব থেকে তওবা করে হালাল কাজকর্ম শুরু করুন। আমি নিম্নে বেকারত্বের কুফল ও হালাল উপার্জনের ফযীলত সমূহ দলিল ও যুক্তি সহকারে পেশ করছিঃ
হালাল উপার্জনের ফযীলত সমূহঃ--
(১) হুযুর আনােয়ার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমায়েছেন সবচেয়ে উত্তম খাদ্য হচ্ছে সেটা, যা মানুষ স্বীয় হাতের উপার্জন দ্বারা খায়। হযরত দাউদ আলাইহিস সালামও স্বীয় উপার্জন থেকে খেতেন।
(বােখারী ও মিশকাত উপার্জন অধ্যায় দ্রষ্টব্য)
(২) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, পবিত্র জিনিস হচ্ছে সেটা, তা তুমি স্বীয় উপার্জন থেকে খাও এবং তােমার সন্তানেরাও তােমার উপার্জন অর্থাৎ মা-বাপ সন্তানদের উপার্জন খেতে পারে।
(তিরমিযী, ইবনে মাযা)।
(৩) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, এমন এক যুগ আসবে, যে সময় টাকা-পয়সা ছাড়া কোন কাজ হবে না।
(৪) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, হালাল উপার্জন ফরযের
পর ফরয। (বায়হাকী) অর্থাৎ নামায রােযার
পর হালাল উপার্জন ফরয।
(৫) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, আল্লাহতাআলা মুসলমানদেরকে সেই জিনিসের হুকুম দিয়েছেন, যেটার হুকুম নবীগণকে দিয়েছিলেন।
যেমন আল্লাহতাআলা নবীগণকে সম্বােধন করে ফরমায়েছেন
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا
(হে রসুলগণ, হালাল রিজিক উপার্জন করুন এবং নেক আমল করুন)। এবং মুসলমানগণকে বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ
(হে মুসলমানগণ, আমার প্রদত্ত হালাল জিনিসমূহ খাও)।
(৬) অনেক লােক হাত প্রসারিত করে একান্ত বিনীতভাবে দু'আসমূহ প্রার্থনা করে। অথচ ওদের খাদ্য ও পােষাক হারাম উপার্জনের হয়ে থাকে। তাই ওদের দুআ কিভাবে কবুল হতে পারে। (মুসলিম)।
(৭) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, তিন ধরনের লােক ব্যতীত
অন্য কারাে ভিক্ষা করা নাজায়েয। এক, যে কোন কর্জগ্রহীতার জামিন হয়েছিল এবং
সেই কর্জ ওকে দিতে হচ্ছে। দুইঃ যার সম্পদ
দৈব ঘটনায় বিনষ্ট হয়ে গেছে। তিনঃ যে অভাবের কারণে উপবাস থাকছে। এ তিন ধরনের নাক ব্যতীত অন্যদের ভিক্ষা করা হালাল নয়। (মুসলিম, মিশকাত, যাকাত অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
(৮) একবার হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমতে এক আনসারী ভিক্ষা চাইলাে। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেনঃ তােমার ঘরে কিছু আছে? আরয করলাে, মাত্র একটি কম্বল ত ছে, যেটি অর্ধেক বিছিয়ে অর্ধেক গায়ে দি এবং একটি পেয়ালা আছে, যেটা দিয়ে পানি পান করি। ফরমালেন, সে দু’টা নিয়ে এসাে। সে নিয়ে আসলাে। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত সাহাবাগণকে সম্বােধন করে ফরমালেন, এ দু’টা খরিদ করার কে আছে? একজন আরয করলেন, আমি এক দিরম্ দিয়ে নিতে রাজি আছি। পুনরায় হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন, এক দিরম থেকে অধিক দিতে রাজি কে আছে? অন্য একজন আরয করলেন, আমি দু’দিরম দিয়ে খরিদ করতে রাজি আছি। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম) জিনিস দু’টা ওনাকে দিয়ে দিলেন (নিলাম প্রমাণিত হলাে) এবং দিরম দু’টি সেই ভিক্ষুককে দিয়ে ফরমালেন, এক দিরমের খাদ্যশস্য ক্রয় করে ঘরে রেখে এসাে। এবং অপর দিরম দিয়ে একটি কুড়াল ক্রয় করে আমার কাছে নিয়ে এসাে। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ পবিত্র হাতে সেই কুড়ালে হ ল লাগিয়ে দিলেন এবং ফরমালেন-যাও, লাকড়ী কেটে বিক্রি কর এবং পনের দিন পর আমার সাথে দেখা কর। নির্দেশমত সে আনচারী পনের দিন পর্যন্ত লাকড়ী কেটে বিক্রি করলাে এবং পনের দিন পর বারগাহে নববীতে হাজির হলাে। তখন ওর কাছে খাওয়া-দাওয়া বাবত খরচের পর দশ দিরম অবশিষ্ট ছিল। সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে কাপড় এবং কিছু অংশ দিয়ে খাদ্যশস্য ক্রয় করলাে। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওকে ফরমালেন, তােমার জন্য এ কষ্ট ভিক্ষা থেকে উত্তম। (ইবনে মাযা, মিশকাত, যাকাত অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।
(৯) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-হযরত আবু যর (রাদি আল্লাহু আনহু):কে ফরমালেন, তােমরা লােকদের থেকে কিছু প্রার্থনা কর না। আরয করলেন,খুবই ভালো খুবই ভাল। পুনরায় ফরমালেন, যদি ঘােড়ার উপর থেকে তােমাদের চাবুক নিচে পড়ে যায়, তাহলে সেটাও উঠায়ে দেয়ার জন্য কাউকে বল না,
নিজে নেমে উঠায়ে নও। (আহমদ, মিশকাত)
(১০) হযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, যে ব্যক্তি ভিক্ষা না করার জিম্মাদার হয়ে যায়, আমি ওর জন্য জান্নাতের জিম্মাদার। (নসাঈ, আবু দাউদ)।
(১১) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, যে ব্যক্তি নিজের অভাব অনটনের আর্জি বান্দার কাছে পেশ করে, আল্লাহতাআলা ওর অভাব অনটন বৃদ্ধি করেন।
যুক্তির আলােকে উপার্জনের উপকারিতাঃ---
(১) হালাল উপার্জন নবীগণের সুন্নাত,
(২) উপার্জনের দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং
বর্ধিত সম্পদ দান-খয়রাত, হজ্ব-যাকাত, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা যায়। হযরত উসমান (রাদি আল্লাহু আনহু) সম্পদের মাধ্যমে জান্নাত ক্রয় করে নিয়েছেন। এজন্য ওনার বেলায় বলা হয়েছে- افعلوا ما شئتم
অর্থাৎ (যা খুশী তা করতে পারেন)
(৩) উপার্জন মানুষকে অনেক অপরাধ থেকে বিরত রাখে। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, ঝগড়া-বিবাদ, বদমায়েশী অলসতা ইত্যাদি বেকারত্বের পরিনাম।
(৪) উপার্জন দ্বারা মানুষের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় এবং মন থেকে অহংকার বিদূরিত হয়।
(৫) অভাব অনটন থেকে রক্ষা পাবার উপায় হচ্ছে উপার্জন।
(৬) যে কেউ যখন উপার্জনের জন্য বের হয়, তখন আমলনামা লিখার জন্য নিয়ােজিত ফিরিশতাদ্বয় বলেন, আল্লাহ তােমার এ প্রচেষ্টার মধ্যে বরকত দান করুক এবং তােমার উপার্জনকে জান্নাতের ভাণ্ডারে পরিণত করুক। এ দুআর সময় আসমান-জমিনের সমস্ত ফিরিশতা আমীন’ বলেন। (তফসীর নঈমী ২য় পারা দ্রষ্টব্য)।
পরিশেষ এই বলতে হয় আল্লাহতালা প্রত্যেক ইমানদার এর প্রতি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করেছেন.(আলহামদুলিল্লাহ্)
আপনি তো মুসলিম?? আপনি কি জ্ঞান অর্জন করছেন??উত্তরঃ--- হা/না
যদি করেন তাহলে সেই জ্ঞান কে কি ভাবে ব্যয় করছেন হালাল পথে??না হারাম পথে??
যদি জ্ঞান অর্জনকারী না হন?? তাহলে আপনার জীবনে কল্যান আসবে কি করে??আপনার জন্য যেমন নামায ফরজ করা হয়েছে ঠিক সেই একই ভাবে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করা হয়েছে(এই জন্য যে সেই জ্ঞানের মাধ্যমে হালাল রুজি খুঁজবেন)।।
আল্লাহতালা আপনাকে আমাকে জ্ঞান অর্জনকারী দের অন্তর্ভুক্ত করুন সাথে সাথে হালাল উপার্জক কারী দের অন্তরে সামিল করুন।।
সেই জ্ঞান অর্জন ও উপরার্জনের দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর হোক।।আল্লাহতালা সকল কে বোঝার তৌফিক দান করুন।।
বিঃদ্রঃ--- যখন কোরআন হুকুম করছে তোমরা নামাজ পড়ো পড়ার পরেই রুজিরোজগার জন্য দুনিয়াতে ওসিলা তালাশ করো।।তাহলে আপনি কেন মসজিদের মধ্যে পড়ে আছেন???
তোমরা মসজিদ কেও ছেড়ে দিওনা,তোমারা জীবিকাহীন জীবনপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে মসজিদ মুখী হয়োনা।জীবিকা অন্বেষণ করো আল্লাহতালা অধিক ইবাদত করতে।।তার মাঝে কল্যাণ আছে।
লেখার মধ্যে ভুল ত্রুটি হলে মাফ করবেন।।
*তথ্য সূত্রঃ---*
(উইকিপিডিয়া, ইসলামী জীবন ব্যাবস্থা,সহ অন্য কিতাব)
(উইকিপিডিয়া, ইসলামী জীবন ব্যাবস্থা,সহ অন্য কিতাব)
মাশাআল্লাহ্, খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপস্থাপনা করেছেন। আল্লাহ্ ও নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। এবং আমাদেরকেও ইসলামকে প্রকৃতভাবে হৃদয়ে ধারণ করার ও পালন করার তৌফিক দান করুন।
ReplyDeleteযাজাকাল্লাহু খাইরান।।
Deleteঅনেক অনেক শুকরিয়া।।
নিজস্ব অভিমত দেওয়ার জন্য।।
আল্লাহতালা আপনাকে আমাকে আর বেশি তৌফীক দিন।।
আমিন ইয়া রাব্বাল আলামীন