Wednesday, 26 October 2022

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজের বর্ননা।।

 

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম
Madina Madina Madina 

আমরা এই নামাজ কেন পড়ব? 

কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ কাজটি তার জন্য কল্যাণকর কি না সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলা হয় ।

মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে কল্যান লাভের জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তার নিকট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইস্তেখারা করতে হয় বা সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়,যেন তিনি তার সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী জন্য উপকারী হয়। বিয়ে, চাকুরী, ব্যবসা,সফরসহ ইত্যাদি বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা হয় বা করা উত্তম।

এই নামাজ সংক্রান্ত হাদীসঃ-

জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেনঃ যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ছাড়া দুই রাক’আত নামায আদায় করে নেয়,(নফল নামাজ) অতঃপর বলেঃ


اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ.


বাংলা উচ্চারণঃ-

”আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না “হাযাল আমরা” খাইরুল্লি ফীহ- দ্বীনী ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী ওয়া-্ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা’আশী ওয়াআকীবাতি আমরি,ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী।”


বাংলা অর্থঃ-

“হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে, ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। এবং যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”।

(তিরমিজি ৪৮০ ইবনু মাজাহ (১৩৮০,রিয়াদুস সলিহীন ৭২২)

এই-নামাজ পড়ার পদ্ধতিঃ-

কেউ যদি আরবীতে বা বাংলাতে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে চান, তাহলে করতে পারেন ।


نويت ان اصلي لله تعالى ركعتى صلواة الاستخارة نفل متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলায় উচ্চারণ:- নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ইস্তেখারাতি নাফলা, মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।


অর্থ/বাংলায় নিয়াত:-

“আমি দুই রাকাত ইস্তেখারা নফল নামাজের নিয়াত করছি আল্লাহ তা’আলার জন্য, মুখ আমার কা’বা শরিফের দিকে আল্লাহু আকবার” ।


অন্তরে ইস্তেখারার উদ্দেশ্যে নিয়ত ঠিক রাখতে হবে।


তারপর প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পর, সুরা কাফেরুন (অথবা যেকোনো একটি সূরা) পড়তে হবে আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর সুরা এখলাস (অথবা যেকোনো অন্য আরেকটি) সূরা পড়তে হবে ।


নামাজ সমাপ্তির পর নিম্নের দোয়া টি পাঠ করার পূর্বে ও পরে সুরা ফাতিহার ও দরুদপাঠ করবে।।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي ومعاشِى وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ.

বাংলা উচ্চারণঃ-

”আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না “হাযাল আমরা” খাইরুল্লি ফীহ- দ্বীনী ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী ওয়া-্ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা’আশী ওয়াআকীবাতি আমরি,ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী।”


বাংলা অর্থঃ-

“হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে, ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। এবং যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”।

এ দু’আর মধ্যে যেখানে “হাজাল আমরা” শব্দটি আসবে, সেখানে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন সেটি স্মরণ করবেন। উক্ত দু’আ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবেন। সে কাজের মধ্যে আপনার জন্য কল্যাণ রয়েছে ।


জরুরী কিছু কথা:–

(১) ইস্তিখারার দুয়া মুখস্ত না থাকলে দেখে দেখে তা পড়তে পারবেন অসুবিধা নেই। তবে মুখস্ত পড়া বেশি ভাল।

(২) ইস্তিখারা করার পর তার উদ্দিষ্ট বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমেও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে আবার স্বপ্ন ছাড়াও মনের মধ্যে সে কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে।

(৩) উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনিত হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ়ভাবে কাজে এগিয়ে যান। পিছুপা হবেন না বা হীনমন্যতায় ভূগবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

(৪) সালাতুল ইস্তিখারা ও দোয়া পড়ার পরও সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত না হতে পারলে একধিকবার তা পড়া জায়েয আছে। 

(৫) এক জনের পক্ষ থেকে আরেকজন সালাতুল ইস্তিখারা আদায় করতে পারবে না। তবে সাধারণভাবে তার কল্যাণের জন্য দুয়া করতে পারে।

(৬) অন্যায় বা হারাম কাজে এমন কি মাকরূহ কাজেও ইস্তিখারা করা জায়েজ নেই।

(৭) সাত বার ইস্তেখারাহ করা উত্তম। ইস্তেখারা করার সময় যদি স্বপ্নে সাদা অথবা সবুজ দেখা যায় তা হলে ভালো লক্ষন বুঝতে হবে।। আর যদি কালো বা লাল দেখা যায় তা হলে খারাপ লক্ষন বুঝতে হবে।


Thursday, 9 May 2019

আপনি আপনার মৃত আব্বা ও মা ও আত্মীয়স্বজন এর জন্য কি কি করলে সেই দুয়া ও সওয়াব তাঁরা কবরে শুয়ে শুয়ে পান??পবিত্র আল কোরআন ও হাদীসের আলোকে আপনাদের জন্য তুলে ধরলাম।।(সংকলকঃ- সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব )

আপনি আপনার মৃত আব্বা ও মা ও আত্মীয়স্বজন এর জন্য কি কি করলে সেই দুয়া ও সওয়াব তাঁরা কবরে শুয়ে শুয়ে পান??
পবিত্র আল কোরআন ও হাদীসের আলোকে আপনাদের জন্য তুলে ধরলাম।।
(সংকলকঃ- সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব)

 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم 
আল্লাহর নামে আরম্ভ জিনি অসীম দয়া ও রহমতের মালিক 
"اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ "
আল্লাহর নামে আরম্ভ জিনি অসীম দয়া ও রহমতের মালিক


  

Monday, 8 April 2019

বিষয়ঃ-- শিক্ষক হিসেবে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাত্র হজরত উবাইব ইবনে কাব, হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত, হজরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম।।

বিষয়ঃ-- শিক্ষক হিসেবে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাত্র হজরত উবাইব ইবনে কাব, হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত, হজরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম।।
নবী পাক পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুনিয়া থেকে পর্দা নেওয়ার পরে খলিফায়ে আযম সিদ্দিকে আকবর হজরত আবুবকর সিদ্দিক রাদ্বি আল্লাহু তায়ালা আনহুর খিলাফত সময় হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু সাধারন ভাবে ঘোষণা করেন, যারা কুরআন হিফয  করেন এবং যাদের কাছে কোরআনের কোন অংশ লিখা আছে, তারা যায়েদ ইবনে সাবিত রাদ্বি আল্লাহু তায়ালা  আনহুর কাছে যেয়ে তাকে তা পৌছে দেবে। 

এ নির্দেশ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই   চামড়া, পাথর ও কাঠের টুকরা প্রভৃতিতে যার কাছে যে পরিমান ছিল, তিনি তা হযরত যায়েদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুর কাছে জমা করেন।


জমা দেয়া শেষ হলে যায়িদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু যাচাই আরম্ভ করেন এবং হাফেযে কুরআনের সাথে মিলিয়ে তারতীব এ ধারাবাহিকতা পরীক্ষা করেন। কোন আয়াত সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিঃসন্দেহ না হওয়া পর্যন্ত তা লিখতেন না।


একবার হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু একটি আয়াত এরূপে পাঠ করেন :.....

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ
[সুরা তাওবা আয়াত নাম্বার ১০০]

হযরত যায়িদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু তা শােনে বলেন, والأنصار, শব্দের পরে এবং الذین শব্দের পূর্বে একটি و , অক্ষর অর্থাৎ والذین, পড়তে হবে।
হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু সন্দেহের মধ্যে পতিত হলেন। এরপর তিনি উবাই ইবনে কা'ব রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করেন।

হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, যায়িদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুর কিরাআতহ শুদ্ধ, এ বলে তিনি হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুর মন থেকে সন্দেহ দূর করে দেয়ার জন্য বলেন.....

“আল্লাহর শপথ! নবী পাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে যাবার সময় আমাকে এ আযত টি শিক্ষা দিয়েছিলেন।”

এরপর হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তা'আলা নিজের ভুল সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হন।

এরূপে যে কোন সাহাবীর কিরাআত সম্বন্ধে হযরত যায়েদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর মনে সন্দেহ হত, তিনি একে উত্তমরূপে যাচাই ও পরীক্ষা করে নিয়েছেন। সম্পূর্ণরূপে নিঃসন্দেহ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তা লিখতেন না।

হযরত যায়িদ রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু এরূপে কুরআন সংকলনে এমন শ্রম ও ধৈর্যসহকারে সতর্কতা অবলম্বন করে কুরআন সম্বন্ধে ভবিষ্যতের সর্বপ্রকারের মতবিরােধের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।


সুতরাং প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তিই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, চৌদ্দশত বছর পূর্বে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যে কুরআন সুদীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নাযিল হয়েছিল, তা যেরূপ নাযিল হয়েছিল, আজও তা অবিকল সেরূপই বিদ্যমান রয়েছে।


এ কারণেই খ্রীষ্টান লেখক স্যার উইলিয়াম মূর ও তাঁর গ্রন্থে লিখতে বাধ্য হয়েছেন— “আমরা জানি, দুনিয়ার এমন কোন ধর্মগ্রন্থই নেই, যা পূর্ণ বার শতাব্দী পর্যন্ত কুরআনের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে অবিকৃত ও অপরিবর্তিতভাবে বিদ্যমান রয়েছে।”

আমাদের শিক্ষনীয় বিষয়ঃ--

(১) নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সকল সাহাবী রাদ্বি আল্লাহু তায়ালা আনহুম গন নিজেদের শিক্ষক হিসেবে মানতেন।।

(২)প্রত্যেক সাহাবী কিছু সমস্যার মধ্যে পড়লে তাদের মধ্যে যে সাহাবী যে বিষয়ে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উৎকৃষ্ট শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তাঁর কাছে গিয়ে সমস্যা সমাধান করতেন।।

(৩)এই ঘটনা থেকে আমাদের ইমান কে মজবুতি দান করে পবিত্র কোরআন শরিফ কত হিকমতের সঙ্গে অনুলিপি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।।

(৪)এ ঘটনা থেকে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বি আল্লাহু তায়ালা আনহু শাসন কার্যক্রম কত নিখুঁতভাবে পরিচালনা করেছেনে তার আভাস মিলেছে (আলহামদুলিল্লাহ)।

(৫)এ ঘটনা থেকে আমাদের এই শিক্ষা নেওয়া দরকার যে প্রতি মুহুর্তে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা প্রদান করতেন।। কখনো বাজারে রাস্তায় যেতে যেতে বা কখনো মসজিদে মিম্বারে বা কখনো ফাঁকা ময়দানের মধ্যে।।


হে মুসলিম সম্প্রদায় তোমার কি তোমাদের মুখের ভাষার দিকে খেয়াল করবেনা??
যে নবী কে শিক্ষা দান করে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিলেন সুরা আর রহমানের মধ্যে.....
عَلَّمَ الْقُرْآنَ
তিনি(আল্লাহ্)  কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন(নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে)।।
হে মুসলিম সম্প্রদায় নিজের অন্তর কে প্রশ্ন করো...
যে নবী কে আল্লাহ তায়ালা নিজের হিফাজতে শিক্ষা দান করেছেন সেই নবী কে মুর্খ বলতে তোমার ইমানে আঘাত লাগে না??
আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে আপনাকে হিফাজত করুন এই রকমের বেয়াদবি ও ফিতনা থেকে।।

Tuesday, 26 March 2019

57 টি নতুন বই পুনরায় পি ডি এফ


*আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ আরো সাতান্নটি বই পি ডি এফ করলাম। বই গুলি ছোটো কিন্তু অনলাইনে অনেক বড় সাইজের ছিল কিছুটা ছোটো করেছি। করতে গিয়ে কোয়ালিটি মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ যা পড়া যাবে।*


(১)বইঃ-- আহালে বাইয়াত ও আসহাবের প্রতি ভক্তিতে মুক্তি

মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই

অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)

ডাউনলোড (16 Mb)লিঙ্কঃ--
https://www.mediafire.com/download/391i3lh969iki9i

(২)বইঃ-- নজদ অঞ্চল ও তামিম গোত্র সম্পর্কিত হাদীসের অপব্যাখ্যার রদ

অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)

ডাউনলোড ( 1.5Mb)লিঙ্কঃ--
https://www.mediafire.com/download/pfzxa2i9jnzioy3

(৩) বইঃ-- শরিয়তে মোহাম্মাদীয়া রদ্দে তরীকায়ে মুহাম্মাদীয়া

লেখকঃ-- ইদ্রিশ আলি রেজিভী (বাংলাদেশ)

ডাউনলোড(5.76Mb)লিঙ্কঃ--
https://www.mediafire.com/download/sjbygodtm4zg9dj

(৪)বইঃ-- বাইবেল কি খোদার বানী?
লেখকঃ-- আহমদ দিদাত
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (4.15 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/aj1pbj7yspejl1a
(৫)বইঃ--তাসাউফ সমগ্র
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (13Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/r75rs29kwb8g9dy
(৬)বইঃ--ঈদে মিলাদুন নবী প্রামাণ্য দলিল
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (13.5 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/i2rlxo0mc4v4xoy
(৭)বইঃ-- আহলে হাদীস মতবাদ খন্ডন
মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (14.9 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/aesbkkmth26w1vp
(৮)বইঃ-- ওহাবী দের প্রতি নসীহত
মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (2.9 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/eg9ibmr1l31ddvg
(৯)বইঃ-- রসুল প্রেম ও তার আনুগত্য
মুলঃ-- আল্লামা ডঃ জি এফ হাদ্দাদ
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (2.6 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/34xhd1munqqk2fq
(১০)বইঃ-- সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাফ কাটি কিনা?
লেখকঃ-- মুফতি মোজাফফর আহমদ (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (1 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/50d48rq23tn9c3h
(১১)বইঃ-- ইসমাঈল দেহলভী ও বালাকোটের যুদ্ধ
লেখকঃ-- শাহ আবুল হাসান ফারুকী দেহলভী
ডাউনলোড (3.5 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/lar6edsihk4ucj8
(১২)বইঃ-- জান্নাতী দল তথা সুন্নী জামাত কাহারা?
লেখকঃ-- মোহাম্মদ আব্দুল কারীম নাঈমী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (4.7 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/xf15h6kyy7w95qr
(১৩)বইঃ-- মিলাদে সুয়ুতী ও মিলাদ কেয়ামের দলিল
অনুবাদকঃ-- মাওলানা আব্দুল মান্নান (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (8.5 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/z7h99kz5d154e92
(১৪)বইঃ-- মাওয়ায়িযে নঈমীয়া
লেখকঃ-- আল্লামা আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (13.5 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/qrwfk41h8rqrudd
(১৫)বইঃ-- আউলিয়া কেরামের মাযারে ফুল চাদর দেওয়া কি?
লেখকঃ-- সৈয়দ হাসান ইমাম (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (0.9 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/gyadrd3drqa9xaq
(১৬)বইঃ-- ইসলাম ও বিজ্ঞান
মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (1.05 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/67dkwaa34e4wts3
(১৭)বইঃ-- ছায়া বিহীন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কায়া
লেখকঃ-- কলম সম্রাট আরশাদ আল কাদেরী আলাইহির রহমান
ডাউনলোড (2.2 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/vzte7ee7tdtlatu
(১৮)বইঃ-- তাবারুকাত (ফজিলত ও বরকত)
লেখকঃ-- শাহ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল হালিম
ডাউনলোড (3.6 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/mjma70nhtv59s2s
(১৯)বইঃ-- নারায়ে রিসালতের বৈধতা
লেখকঃ-- ইমামে আহলে সুন্নত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ আহমদ রেযা খান আলাইহির রহমান
ডাউনলোড (2.13 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/e34nnxqxeq4nbf6
(২০)বইঃ-- মাওলানা রুমীর ঐশী প্রেমের দর্পন
মূলঃ-- ফাতেমা ফ্লিয়ার নাসেরী বান্নিন (অস্ট্রেলিয়া)
অনুবাদকঃ- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন ( বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (1.13 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/e6zq70aos3e33zj
(২১)বইঃ-- কোরআন ও হাদীসের আলোকে শাফায়াত
লেখকঃ-- ইমামে আহলে সুন্নত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ আহমদ রেযা খান আলাইহির রহমান
ডাউনলোড (1.51 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/10o8sjhdbqn40kg
(২২)বইঃ-- সাত মাসায়েলের সমাধান
লেখকঃ-- হাজী ইমদাদুল্লাহ মহাজীরে মাক্কী আলাইহির রহমান
ডাউনলোড (2.3 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/em26ata7shb78cu
(২৩)বইঃ-- ফায়সালায়ে পাঞ্জ মাশায়ালা
(ফরজ নামাজ,নামাজের পর সম্লিলিত দোয়া,একামতের সময় কখন দাঁড়ানো সুন্নত, আজানের আগে ও পরে দরুদ সালাম,প্রীয় নবীর নাম শুনে আঙুল চুম্বন সহ পাঁচ মাশায়েল)
লেখকঃ-- মহম্মদ ইকবাল হোসেন আল কাদেরী (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (3.22 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/8dobc770y67hcaa
(২৪)বইঃ-- আল ফিক হুল আকবর
লেখকঃ-- ইমামে আযম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (2.15 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/fnacwacowb112u2
(২৫)বইঃ-- তানযীহুল রাহমান আনিল কিযযে ওয়ান নুকশান(মিথ্যা সহ সব ধরনের দোষ ত্রুটি থেকে পরম করুনাময়এর পবিত্রের বিবরণ)
লেখকঃ-- মাওলানা আব্দুল মান্নান (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (3.68 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/bd4d8fmdz2pqohf
(২৬)বইঃ-- ওহাবী চিন্তাধারা
লেখকঃ-- কাজী মহম্মদ মঈনুদ্দিন আশরাফী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (3.82 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/n07uy5fpr4p1u2l
(২৭)বইঃ-- আমলে শরিয়ত
লেখকঃ-- আঞ্জুমানে আহমাদিয়া সুন্নীয়া (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (4.45 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/jxx2gj6eplk61nd
(২৮)বইঃ-- আসরারুল আহকাম
লেখকঃ-- আল্লামা আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (9.2 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/u6y5v60n9ilcogb
(২৯)বইঃ-- আউলিয়া কেরামের ওসিলাই খোদার রহমত
লেখকঃ-- আল্লামা আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (4.85 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/couua0ic64alvzl
(৩০)বইঃ-- ইসলাম ও ধর্মীয় সংস্কার
মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (5.64 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/obov7enuaejz4ua
(৩১)বইঃ-- একটি মাত্র দল বেহেস্তী বাহাত্তর দল জাহান্নামী
লেখকঃ-- মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (8.05 Mb) লিঙ্কঃ---
একটি মাত্র দল বেহেস্তী বাহাত্তর দল জাহান্নামী লেখকঃ-- মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী.pdf
(৩২)বইঃ-- কোরআনের ভুল অনুবাদের নির্দেশিকা (আলা হজরতের তাৎপর্য পূর্ন মার্জিত ব্যাক্ষা)
লেখকঃ-- সৈয়দ মোহাম্মদ সিরা জুল ইসলাম চিশতী (পাকিস্থান)
ডাউনলোড (5.45 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/9h36bet7u30zdn9
(৩৩)বইঃ-- শিয়া ও মাওদুদী মতবাদের পারস্পারিক সম্পর্ক
লেখকঃ-- আবু মাকনুন (বাংলাদেশী)
ডাউনলোড (8.86 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/l7xg4her0vbn86l
(৩৪)বইঃ-- দরসুল কোরআন
লেখকঃ-- আল্লামা আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (10.61 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/62wbdjw6h73kwrv
(৩৫)বইঃ-- বাইবেল কোরআন ও হজরত মহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুলঃ-- আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশীক তুর্কি রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ-- কাজী সাইফুদ্দিন হোসাইন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (10.23 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/5xvdz3e6g3l95w2
(৩৬)বইঃ--ভ্রান্তির বেড়াজালে গোলাম আজম
লেখকঃ-- ফরিদ আহমদ চৌধুরী (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (8Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/iwaoutza388gt6d
(৩৭)বইঃ--ওহাবী আন্দোলন
লেখকঃ--আব্দুল মাওদুদ(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (13 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/arruv9t2gert4rp
(৩৮)বইঃ-- ফরমানে মোস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লাম
লেখকঃ--আজিজুল হক কাদেরী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (20 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/1o8v09c86f212zb
(৩৯)বইঃ--সহী মুরাদুল মোমেনীন
লেখকঃ--মাওলানা রেদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী
ডাউনলোড (21 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/12iqvmmz9czipcn
(৪০) বইঃ-- হকিকতে খানায় কাবা
লেখকঃ--মাওলানা রেদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী
ডাউনলোড (8 Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/53wrorcmdea222c
(৪১)বইঃ-- ইমাম আহমদ রেযা’ আলাইহির রহমান প্রতি অপবাদের জবাব.pdf
মুলঃ- অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ (পাকিস্তান)
অনুবাদকঃ- কাজী সাইফুদ্দিন হোসেন (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(5Mb) লিঙ্কঃ-
https://www.mediafire.com/download/z8yak0qnx17as0t
(৪২)বইঃ--রাসূলুল্লাহﷺ নূর.Pdf
লেখকঃ--ইমাম আহমদ শেহাবুদ্দিন আল কাসতলানী রহমাতুল্লাহ আলাই
অনুবাদকঃ- কাজী সাইফুদ্দিন হোসেন(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(4Mb)লিঙ্কঃ--- https://www.mediafire.com/download/1k183puhjq3hx20
(৪৩)বইঃ- আলা মওদূদীর লণ্ডনের ভাষণের দাঁতভাঙ্গা জবাব -.pdf
লেখকঃ-- ফরিদ আহমদ চৌধুরী
ডাউনলোডঃ--(77MB থেকে 9 MB)
https://www.mediafire.com/download/e2a5e7r3azfzoh5
(৪৪)বইঃ- গুলেস্তাঁ ও বোঁস্তার(বাংলা উচ্চারণ ও বঙ্গানুবাদ).Pdf
মূল_লেখকঃ-- আল্লামা আবু মহম্মদ মুসলেউদ্দিন বিন আব্দুল্লা সিরাজী(পরিচিত নাম শায়েখ শাদী সিরাজী) আলাইহির রহমান
অনুবাদকঃ-- এ বি এম আব্দুল মান্নান(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড_গুলেস্তাঁঃ--(124MB থেকে 15 MB)
https://www.mediafire.com/download/s7e7nacux8pxy38
ডাউনলোড_বোঁস্তার--(147MB থেকে 20 MB)
https://www.mediafire.com/download/20x49anc52kj9yk
(৪৫)বইঃ--ঈদে মিলাদুন নবী হচ্ছে সর্ব শ্রেষ্ঠ ঈদ
লেখকঃ--মুফতি মহম্মদ আলি আকবর(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(32Mb to 5.2Mb)লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/h9va996cty29i7u
(৪৬)বইঃ--বিশ্ব নবীর জন্ম ইতিহাস ও মিলাদের হুকুম(দলিল সহকারে)
লেখকঃ--মাওলানা হাফেজ মহম্মদ আব্দুল হক(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(57Mb to 25Mb)লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/d4ewl35fuw4mxd1
(৪৭)বইঃ--পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবীﷺ সংকলন
লেখকঃ--শায়েখ গোলাম মাওলা নকশাবন্দী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(36Mb to 5.7Mb)লিঙ্কঃ---
(৪৮)বইঃ--ঈদে মিলাদুন নবী কি কেন ও তার ফজিলত
লেখকঃ--সৈয়দ শাহ্‌ মহম্মদ জুনায়েদ ওসমানী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (6Mb)লিঙ্কঃ--
https://www.mediafire.com/download/f76n5540olnytl7
(৪৯)বইঃ মাহে নূর রবিউল অাউয়াল শরীফের তোহফা।pdf.
লেখকঃ-- মুফতি কাজী মহম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ (বাংলাদেশ)
ডাউনলোড(2.2Mb)লিঙ্কঃ-
https://www.mediafire.com/download/v4t8xei4suz5r3b
(৫০)বইঃ- আযানের আগে সালাত-সালাম.pdf
লেখকঃ--হাফেজ মোহাম্মদ সোলায়মান আনসারী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (27Mb  থেকে 3.9Mb)লিঙ্কঃ--
https://www.mediafire.com/download/h4f3ui7tqv82rz3
(৫১)বইঃ--বাহারে শরীয়ত নতুন(সকল খণ্ড একত্রে)
লেখকঃ-- আল্লামা আমজাদ আলি আলাইহির রহমান
ডাউনলোড (178Mb থেকে 42 Mb) লিঙ্কঃ----
https://www.mediafire.com/download/73mb53d8fut93yh
(৫২)বইঃ-কানুনে শরীয়ত(প্রথম খন্ড)নতুন
লেখকঃ-- আল্লামা শামসুদ্দিন আহমদ জাফরী রেজভী রহমাতুল্লাহ আলাই
ডাউনলোড (52.5 Mb থেকে 12.8Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/3lawy81k321lwy1
(৫৩)বইঃ--যলযালা নতুন.pdf
লেখকঃ-- কলম সম্রাট আরশাদুল কাদেরীرحمة الله عليه
ডাউনলোড (37Mb থেকে 8.8 Mb) লিঙ্কঃ----
https://www.mediafire.com/download/2y3f6f5338w0ssj
(৫৪)বইঃ-আহলে সুন্নাত বনাম আহলে বিদাআত নতুন .pdf
লেখকঃ-- আল্লামা অধ্যক্ষ আব্দুল করিম সিরাজনগরী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (48 Mb থেকে 11Mb) লিঙ্কঃ---
https://www.mediafire.com/download/40e61p9vp9dnsef
(৫৫)বইঃ--ষড়যন্ত্রের অন্তরালে অজানা ইতিহাস(১ম খন্ড)নতুন .pdf
লেখকঃ-- মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (24Mb থেকে 5 Mb) লিঙ্কঃ----
https://www.mediafire.com/download/be3yyl5vih09vv0
(৫৬)বইঃ--মি'রাজুল মু'মিনীন নতুন.pdf
লেখকঃ-- কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী(বাংলাদেশ)
ডাউনলোড (85Mb থেকে 20 Mb) লিঙ্কঃ----
https://www.mediafire.com/download/now2mz9ic4i9hbi

(৫৭)বইঃ--মি'রাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম.pdf
মূল-লেখকঃ-- আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাযেমী রহমাতুল্লাহ আলাইহি

ডাউনলোড (50Mb থেকে 8.2 Mb) লিঙ্কঃ----
https://www.mediafire.com/download/kwb66eqffc4w105


আল্লাহর রহমতে পুনরায় ৫৭ টি বই পি ডি এফ করতে পেরেছি যদি ডাউনলোড লিঙ্ক মিসিং হয় অনুগ্রহ করে জানাবেন।
যুক্ত হোন *🌹সুন্নী অনলাইন লাইব্রেরী🌹* হোয়্যাটসেপ গ্রুপে।।·
*🌹সুন্নী অনলাইন লাইব্রেরী🌹*
যুক্ত হওয়ার লিঙ্কঃ--
https://chat.whatsapp.com/KUljhCe2yFn4AURm5pMQ7a
*আমাদের কাজে সহযোগিতা করুন ধন্যবাদ সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব*

Wednesday, 31 October 2018

দীপ্ত সূর্যের গুপ্ত আলো 🖋 লিখেছেন - মেহেদী গালীব ( Mahdi Galib)

দীপ্ত সূর্যের গুপ্ত আলো  
🖋 লিখেছেন - মাহদী গালীব ( Mahdi Galib)


Image may contain: text


১ম পর্ব
আমরা দেখি কি দিয়ে? আলো দিয়ে। আলো যত উজ্জ্বল, দেখব তত বেশী। সবচে উজ্জ্বল কি? উত্তর, সূর্য। দুপুরের সূর্য। কিন্তু আমরা সূর্যকেই দেখতে পাই না। চোখে সয় না। মাধ্যম লাগে, চশমা লাগে। আজব না!
আজ এমনি সূর্যের কথা লিখব। একের পর এক। যাঁকে বুঝতে-দেখতেও মাধ্যম লাগে। এ মাধ্যমের নাম, বিবেক। যিনি সূর্যের মত প্রকাশিত। অবুও অদেখা। অযোগ্যতা আমাদের। তাঁকে পেয়েও পাই নি।
১৪ জুন ১৮৫৬। ২৮ অক্টোবর ১৯২১। ৬৫ বছর ৪ মাস, ১৫ দিন। ২৩,৮৭৭ : তেইশ হাজার আটশত সাতাত্তুর দিন।
গ্রন্থ সংখ্যা পনেরো শতাধিক। হিসেবের সুবিধায় ধরলাম দেড় হাজার। এবার 'দিন' এবং 'বই-সংখ্যা' ভাগ করি।
২৩,৮৭৭ ÷ ১,৫০০ = ১৫.৯১৮ (প্রায় ষোল দিন)।
থামুন। একটু ভুল হচ্ছে। আট বছরে তাঁর প্রথম বই। অতএব, আগের সাত বছর বাদ, ৬৫-৭। ফলাফল, ৫৭ বছর ৪ মাস ১৫ দিন । ২০,৮০৫ : বিশ হাজার আটশ পাঁচ দিন। লিপ ইয়ার ধরি নি। এবার ভাগ করি।
২০,৮০৫÷১,৫০০ = ১৩.৮৭ ( প্রায় চোদ্দ দিন) মানে চোদ্দ দিনে একটি বই লেখা হয়েছে।
আচ্ছা, দেড় হাজার বইয়ে মোট পাতা কত? তবে একদিনে কত পাতা লিখেছেন? ঘন্টায় কত? খোদার কসম জানি না। কল্পনাতেও আসে না।
ছোটতে রচনা পড়েছি। গরুর রচনা। 'কাউ ইজ আ ডোমেস্টিক এনিমেল'। আধ মাস যুঝেছি। মুখস্থ হয় নি। আর আধ মাসে একটা বই লেখা! মাসে দুইটা। থুক্কু! আটাশ দিনে।
সে বই কি রকম? না, 'আম পাতা জোড়া জোড়া' বই না। মহাকাশে কোটি নক্ষত্র। লক্ষ গ্রহ-উপগ্রহ। সব ছুটছে। প্রভাব রাখছে পৃথিবীতে। এইসব ছোটাছুটির হিসেব রাখে জ্যোতির্বিজ্ঞান। তিনি সেই আলোকবর্ষের হিসেব লিখেছেন।
সমাজবিজ্ঞান। আগে মানবিক বিভাগে ছিল। ক'বছর আগেই আলাদা হল। নতুন ফ্যাকাল্টি খুলল। অথচ তিনি শত বছর আগেই সমাজ বিজ্ঞানের ওপর লিখেছেন। জ্ঞানের স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গণিতে দশের ওপর পাই নি। ম্যাট্রিকের টেস্টেও। একুব-বেকুবের সূত্র আজও বুঝি না। তিনি গণিতের সব শাখায় লিখেছেন। এমনকি প্রাইম নাম্বার নিয়েও। গণিত বিভাগের প্রধানও তাঁর থেকে সমাধান নিত।
আমি যাযাবর। জেলায়-থানায় ঘুরি। কত গাছ যে দেখি। প্রায় কিছুই চিনি না। বোটানির ছাত্রদের জিজ্ঞেস করি। তারাও জানে ন। অথচ তিনি গাছ-গাছরার ওপর বিশাল গ্রন্থ লিখে বসে আছেন। শত বছর আগেই। গাছ থেকে ওষুধ হয়। একে ভেষজবিদ্যা বলে। তিনি ভেষজবিদ্যাও লিখেছেন। 'হামদার্দ-বিশ্ববিদ্যালয়' তাঁর লেখার ওপর গবেষণা করেছে। স্বীকার করেছে তাঁর পাণ্ডিত্য।
ভাষা বড় অদ্ভুত। প্রতি তিন মাইলে ভাষা পালটায়। 'খাইছো' হয় 'খাইছুন'। একে বলে ধ্বনিতত্ব। তিনি এর ওপরেও লিখেছেন। তাঁর প্রথম বই আরবী ব্যাকরণে ওপর।
আমি কবিতা লিখি। কবিতার আইন আছে। অনুপ্রাস, অন্তমিল, স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত - আরো মেলা কিছু। অত জানি না, মানিও না। অত মানলে কবিতা লেখাই অসম্ভব। আমার অযোগ্যতা। আর তিনি এসব আইনের মাস্টার ছিলনে। এবং স্রষ্টাও ছিলনে। এ আইনকে বলে বালাগাত, অলংকরণশাস্ত্র।
সব কিছু ছাপিয়ে ছিল তাঁর ফতওয়া। আমাদের সমাজে 'ফতওয়া' শব্দটা ব্যাকডেটেড। খ্যাত-খ্যাত শুনায়। যদিও বিষয়টা বিপরীত। আম্মা বলেন, 'ভাল্লুকের হাতে কোদাল'। ভাল্লুকের হাত ছোট। কোদাল না ধরতে পারে। না কোপাতে পারে। হাস্যকর অবস্থা। ঠিক তেমনি মূর্খ (সম)কওমী সম্প্রদায় ফতওয়াকে বাজারে শব্দ বানিয়েছে।
ফতওয়া মানে আইন। মুফতি সাহেব ফতওয়া দেন। মুফতি মানে আইন নির্ধারক। আইন প্রণেতা না। এবার ভাবুন তো, সুপ্রিমকোর্টের জজ সাহেবের মর্যাদা। যেকোনো জজের মর্যাদা। তারা কি আমজনতা? আমাদের মত? আফসোসের বিষয়, ভাল্লুকের মতই এদেশে চামড়া-চান্দা তুলে খাওয়ারা বিষাক্ত ছত্রাকের মত মুফতি আর ফতওয়ার জন্ম দিচ্ছে।
তাঁর লিখা ফতওয়া গ্রন্থ 'ফওয়ায়ে রেজভিয়া'। মোট তিরিশ খণ্ড। প্রতি খণ্ড গড়ে ৭০০ পাতা। মোট একুশ হাজার পাতা। বিয়াল্লিশ হাজার পৃষ্ঠা। মানবজীবনের সব আছে এতে।
তাঁর ফতওয়া ছিল যুগান্তকারী। জেনে অবাক হবেন, আপনার মানিব্যাগে যে টাকার নোট, সেটা তাঁর বদৌলতেই পেয়েছেন। তাঁর বদৌলতেই এখনো ৯৯.৯০% মুসলিম উদার, মানবিক।
আল্লাহ বলেন : হে মানব জাতী, তোমরা বড়ই তাড়াহুড়ো। আমাদের ধৈর্য কম। তাই লেখা বাড়াচ্ছি না। আজকের সমাপীকা টানছি।
তিনি দুই ঘন্টা ঘুমাতেন। বাইশ ঘন্টা কাজ করতেন। বেশি সময় লেখালেখি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? তাঁরও সংসার ছিল। আয়-রোজগার ছিল। এত লিখতেন কিভাবে? মাসে দুইটা বই। যার জন্য আলাদা ছাপাখানাই দেয়া হয়েছিল।
তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করা হল : আ'লা হযরত! এত কিভাবে লিখেন? তিনি হাসলেন। স্নিগ্ধ তাবাসসুম। বললেন, কলম দিয়ে লেখা হয়। তাই বলে কলম কি লিখতে পারে? না, যিনি কলম ধরেন তিনি লেখেন। জেনে রাখো, আমি আহমাদ রেযা একটি কলম মাত্র। আর আমাকে ধরে যিনি লিখছেন, তিনি বাগদাদ ওয়ালা। তিনি আমার গাউসে পাক!


২য়পর্ব

অর্থনীতি, ইকোনোমিক্স। ভার্সিটির একটি সাবজেক্ট। অর্থনীতি ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য। ফ্যাল কড়ি মাখ তেলের মত। কড়ি বা অর্থ নেই, তেলও নেই। ১৯৪০ থেকে অর্থনীতিকে একটি বিষয় বিবেচনা করা হল। এর আগে সভ্যতা জানতও না। অথচ, ১৯১২ সালে অর্থনীতির বই লিখেন ইমাম আ'লা হযরত। অর্থনীতিকে স্বতন্ত্র সংজ্ঞায়িত করেন। পশ্চিমাদেরও ২৮ বছর আগে। প্রবর্তন করেন যুগান্তকারী পলিসি।
অবশ্য, এডাম স্মিথ অনেক আগেই একটা বই লিখেন। 'ওয়েলথ অভ নেশন' নামে। সেটা মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর। যা খুলে দিয়েছিল পুঁজিবাদ ও সম্রাজ্যবাদীদের দরজা। মানুষের রক্তচোষা অধ্যায়। 'মুক্তবাজার অর্থনীতি', ফ্রিম্যাসন, 'নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার' এবং ইজরাইল একসূতোয় গাঁথা। যার ঘোরতর বিরোধী আ'লা হযরত। একমাত্রও বলা যায়। সে এক বিশাল অধ্যায়। আরেকদিন বলব।

আ'লা হযরত চারটি সূত্র উপস্থাপন করেন।

(i) সঞ্চয় বা সেভিংস।

(ii) ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন।

(iii) মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য।
(iv) ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ।


সঞ্চয় বা সেভিংস :
ধরুন একশ টাকা আছে। ৮৫ টাকা খরচ করলেন। বাকি ১৫ টাকা জমাবেন। যা ধীরে ধীরে বড় হবে। কিস্তির পর কিস্তিতে। এক সময় সে অর্থ আপনি বিনিয়োগ করবেন। আপনার আর্থিক অবস্থা বদলাবে। কথাটা খুব সাধারণ মনে হয়। কিন্তু শত বছর আগের কথা ভাবুন। মানুষ তো অর্থনীতিকেই চিনত না। সেভিংস তো দূর কি বাত। আজকের গরিব দেশগুলোর সঞ্চয় ৫-৮%। আর উন্নত দেশের ১৫% বা বেশি। তাহলে বুঝুন সঞ্চয় কিভাবে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৩৬ সাল। ইংল্যাণ্ডের লর্ড জে. এম কায়নেয 'থিওরি ওভ সেভিংস এণ্ড ইনভেস্টমেন্ট' প্রকাশ করে। যা হুবহু আ'লা হযরতের থিওরি। এজন্য বৃটিশরা তাকে 'লর্ড' উপাধিও দেয়। সম্মানিত করে।
এবার ভাবুন। কার বিয়ে কে পরে মালা! কার আবিষ্কার কে পায় পুরষ্কার।
আরেকটা কথা, আ'লা হযরত নাকি বৃটিশদের দালাল! যদি তাই হয়, তবে বৃটিশরা আ'লা হযরত কে কেন পুরষ্কৃত করল না? কেন এমন অবিচার? আফসোস! শত্রুরা মুসলিমের জ্ঞান কাজে লাগায়। আর আমরা তাঁকে চিনলামও না এখনো (আল্লাহ ন্যায় বিচারক)।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন :
সে যুগে ব্যাংক ছিল হাতেগোনা। এর সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয় ছিল না। আ'লা হযরত মুসলিমদের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। প্রথম সূত্র ছিল সঞ্চয়। এখন ব্যাংক না থাকলে মানুষ জমাবে কোথায়? বলে রাখি, বর্তমান ব্যাংক আর আ'লা হযরত এর ব্যাংকের ব্যাপক তফাত। যা সুদহীন। শরীয়া সমৃদ্ধ। অনেকটা নিরাপদ সিন্দুকের মত। মানুষ জমাবে, ব্যাংকে বেতন দিবে অর্থ রক্ষার জন্য।
এই ব্যাংকি ব্যবস্থার কারণে মানুষ সঞ্চয়মুখি হবে। বাড়বে অর্থের প্রবৃদ্ধি। অল্প পরিসরে বুঝানো কষ্টকর। মালিক আমাদের অনুমানের শক্তি দিক।
মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য :
এখানে বলা হয়, একজন মুসলিম শুধু মাত্র মুসলিমের সাথেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। এতে মুসলিমের অর্থ মুসলিমের কাছেই থাকবে।
এখন ভাবতে পারেন, আ'লা হযরত সংকীর্ণমনা। তিনি বাকিদের ঘৃণা করতেন।
থামুন! গভীরে যান, ডুব দিন। মুসলিমদের শোচনীয় অবস্থা তখন। উসমানীয়দের পতন হচ্ছে। ভারতে বৃটিশ লুটছে। ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। প্রশ্নটা ছিল মুসলিমদের অস্তিত্বের। বেঁচে থাকার। একটা উদাহরণ দেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। ইউরোপে ভয়াবহ অবস্থা। মানুষ না খেয়ে মরে। তারা তখন 'ইউরোপীয় কমন মার্কেট' (E. M. C.) বানায়। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যেই ব্যবসা করত। বাকিদের সুযোগ ছিল না।
আজকে তাদের অবস্থা কোথায়? বিশ্বে সবচে উন্নত অঞ্চল। আফসোস! আ'লা হযরত এর থিওরি তারা ব্যবহার করে। আর আমরা তাঁকে ইংরেজপ্রেমী বানাই।
এছাড়াও আ'লা হযরত কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল, দেশ, রাষ্ট্রের কথা বলেন নি। সারাবিশ্বেই মুসলিম আছে। তাই তার থিওরি সারা বিশ্বেই প্রযোজ্য।
আর অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা বন্ধ হলে মাদক ও অন্যান্য হারাম বস্তুও আসা বন্ধ হবে। সুরক্ষিত থাকবে মুসলিম উম্মাহ। কি চমৎকার পন্থা। 'ফেড্রিক লিস্ট' একজন প্রখ্যাত জার্মান অর্থনীতিবিদ। তিনিও আ'লা হযরত এঁর এই নীতিকে স্বীকার করেছেন।
ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ:
এ পয়েন্টা ভিন্ন। ভাবছেন অর্থনীতির সাথে এসবের কি সম্পর্ক। এখানে আ'লা হযরত এঁর অনন্যতা। যেখানে আমাদের চিন্তা শেষ। সেখানে তাঁর শুরু।
আ'লা হযরত চাইছিল মুসলিমরা শিক্ষিত হোক। যাতে আমরা সভ্যতার সাথে এগুতে পারি। শিক্ষার অনগ্রসর আমাদের ডুবাচ্ছিল।
যাকগে, মূল কথা এটা না। আ'লা হযরত এঁর ব্যাখ্যা ভিন্ন। আ'লা হযরত চাইছিলেন, অর্থনীতি বিষয়টি যেন ইসলামের মৌলিক একটি শাখায় পরিণত হয়। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান যেন এতে সর্বোচ্চ প্রভাব রাখে। ফলে মুসলিমরা হবে অর্থনৈতিক সচেতন।
আজ কষ্ট হয়। সভ্যতা আজ পশ্চিমাদের। তারা যাই বকে, আমরা শিখি। নিজের ইতিহাসও আমরা জানি না।
এই ইতিহাসের এক অদেখা অধ্যায়ের নাম আ'লা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খান। তিনি ডাকছেন দু'হাত বাড়িয়ে। বলছেন তাঁকে আবিষ্কার করতে।

হে নতুন দিনের নব সেনানী!

ওঠ!

ফিরিয়ে আনো এই ব্যথিত সত্তার প্রাপ্য অধিকার,
বেরেলি থেকে সে তোমায় ডাকে বারবার!

৩য়পর্ব

হাফেয কাযিম আলি খান। ইমাম আ'লা হযরত এঁর পূর্বপুরুষ। তিনি জায়গীর পেয়েছিলেন। পুরষ্কার হিসেবে। জমিদারী তো বুঝি আমরা। বৃটিশরা এ প্রথা চালু করে। তেমনি জায়গীর ছিল মোঘলদের সৃষ্টি। জায়গীর অবশ্য আকৃতিতে বড়। কয়েকটি জমিদারী নিয়ে একটি জায়গীর হবে।
আ'লা হযরত এঁর পূর্বপুরুষ সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাবাহিতে ছিল। আর আওরঙ্গজেব মোঘলদের একমাত্র বাদশা। যাকে 'ওয়ালিয়াল্লাহ' বলা হত। পূণ্যবান শাসক।
আ'লা হযরত'দের জায়গীর ছিল 'বুদাউন' জেলার 'কারটাউলি' গ্রাম। বর্তমান বেরেলি শরীফ থেকে ৩৮ কি.মি. দূরে। পুরো গ্রামটাই তাঁদের ছিল ১৯৭৮ অবধি। চল্লিশ কি.মি. জুড়ে ছিল তাদের ভূ-সম্পদ। সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব। এক জেলা থেকে আরেক জেলা। সে যুগে ভারতের গ্রাম বলতে এটাই বুঝাত। ভাবা যায়, ৪০ কি.মি.!
যা-হোক, লেখার উদ্দেশ্য সম্পত্তি না। কিন্তু কি বিশাল সম্পত্তি তাই না। অবাক তথ্য কি জানেন? এত সম্পত্তির পরেও আ'লা হযরত এঁর ওপর যাকাত ফরয হয় নি। মানে যাকাত পরিমাণ সম্পদ কখনো ছিলই না। আজব না!
আ'লা হযরত এঁর ভাই-বোনদের মাঝে সম্পদ ভাগ হল। আ'লা হযরত ও পেলেন। এবং সেদিনেই তাঁর সমস্ত কিছু শ্রদ্ধেয়া মায়ের নামে লিখে দেন। নিজে একদম শূণ্য।
আ'লা হযরত কে কারণ জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, আমি তো চালিয়ে নিব। যেমন করে হোক। কিন্তু আমার মা বিধবা। তিনি কি করবেন? তিনি যেন অসহায় বোধ না করেন। এবং কারো ওপর বোঝা না হন। তাই এমনটি করলাম। এছাড়া মায়ের সম্পদে তো সন্তানের অধিকার আছেই। কখনো লাগলে চেয়ে নিব।
এরপর শুধু বই কেনার জন্য তিনি মায়ের কাছে অর্থ নিতেন। এবং জানা যায় দান-খয়রাতের ক্ষেত্রে শাম্মে হুদা ইমাম জয়নুল আবেদিন আলাইহিস সালাম এঁর সুন্নাত অনুসরণ করতেন। গভীর রাতে অসহায়ের দরজায় অর্থ রাখতেন। এবং নিয়মিত রাখতেন।
এমনিতে তো ছিল না কিছুই। যা আসত বিলিয়ে দিত। যাকাত ফরয হয় কিভাবে!

'আরব্য উপন্যাস' লিখছি না। মহামানবদের জীবনী এমনি। মনে হয় কোনো মহাকব্যের অংশ।
যা-হোক, মূল কথায় আসি। একটা জিনিষ খেয়াল করেছেন? খুব সুক্ষ্ম। অনুমান করুন। আচ্ছা বলছি, বিষটি হচ্ছে 'নারী অধিকার'।
হ্যাঁ, নারী অধিকার। ১,৪০০ বছর আগে। মদিনায় সে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। মদিনা-মুনিব (দ) সর্বোপ্রথম বলেন, নারীর পদতলে জান্নাত। ইসলামই গর্তচাপা থেকে নারীকে উঠিয়েছে। শিশুকন্যার চিৎকারে তখন প্রকম্পিত হত খেজুরপাতা। লুন্ঠিত হত মানবতা। ইসলাম তা ঠেকিয়েছে। মদিনা-মুনিব (দ) দুধমায়ের জন্য নিজের পবিত্র রুমাল বিছালেন। সাহাবারা অবাক হয়েছেন। এত সম্মান একজন নারীকে!
আ'লা হযরর তো ভিন্ন কেউ নন। বিচ্ছিন্ন কেউ নন। তিনি তো মদিনা'র মাইলফলক। তাই তিনি আর মদিনা ভিন্ন হবে কেন!
- তোমার কাছে একশ টাকা আছে। এ টাকা বাবা-মায়ের জন্য। তবে পঁচিশ টাকা বাবাকে দাও। বাকি ৭৫ টাকা দাও মাকে।
- বাবা এবং মা একসাথে পানি চাইলো। আগে মাকে পানি দাও। এরপর বাবাকে।
- বাবা-মা সফর থেকে এসছেন। পা চিপতে চাও। সেবা করতে চাও। তবে জেনে রাখো, অধিকার আগে মায়ের।
কথাগুলো আ'লা হযরত এঁর। এরচে অনন্য অধিকার আর কি হতে পারে? এই নৈতিকতা, সম্মানবোধ হল একটি দরজা। যা বিকশিত করে মানুষের মননে নারীর সম্মান, মমত্ব, মর্যাদা।
ইমাম আ'লা হযরত এঁর পাঁচ সম্মানিত কন্যা ছিলেন। সকলেই যুগ শ্রেষ্ঠা, অনন্যা। আলেমা ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ তাঁদের ছিল।
এ থেকে কি বুঝা যায়? ইমাম আ'লা হযরত নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে আপোস করেন নি। তিনি নিজের মেয়েদের পড়িয়েছেন। শরীয়ত সমৃদ্ধ করেছেন।
অথচ, ভারতেরই কেউ কেউ নারীশিক্ষাকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। ইংরাজি শিক্ষাকে হারাম বলেছিল। এদের লক্ষ্য ছিল মুসলিমদের পিছিয়ে দেয়া { আল্লাহ ও তাঁর প্রেমাষ্পদ (দ) ভালো জানেন}।
একটু ভাবুন। ভাবুন আ'লা হযরত কে নিয়ে। জানুন, পড়ুন। কতটা ডাইনামিক ছিল এ মানুষটা। কতটা মানবিক ছিল। কতটা সৎ ও নির্লোভ ছিল।
তাঁকে গালি দিয়েন না প্লিজ। আমাকে বকেন। গালিবের আঠারো গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। গালিব তো কিট তুল্য। মনে রাখবেন, আ'লা হযরত কে গালি দিলে, গালিটা লাগে মদিনা'র বুকে। সন্তানকে বকলে পিতাও আঘাত পান।
ইমাম আ'লা হযরর না থাকলে 'ওহাবী' চিনতাম না। ওহাবী শব্দটা তাঁর আবিষ্কার। ওহাবী না চিনলে মুসলিম থাকতাম কিনা খোদা মালুম। তিনি আমাদের বাঁচিয়েছেন। ইমান রক্ষা করেছেন। এ ঋণ কি অস্বীকার করতে পারবেন!
আল্লাহ আমাদের কৃতজ্ঞ করুক। কৃতজ্ঞ হবার ক্ষমতা দিক। যাতে আমরা ঋণবোধ করি আমাদের এহসানের ওপর। যে এহসান করেছেন, আমার হৃদয়ের বাদশা। সেই বেরেলির শাহেনশাহ, ইমাম আ'লা হযরত আহমাদ রেযা খান।

৪র্থ-পর্ব


পিএইচডি তো বুঝি। ধরুন প্রাতিষ্ঠানিক পড়া শেষ। মাস্টার্স বা স্নাতক করলেন। কিন্তু আরো জানতে চান। কিন্তু কি পড়বেন? এখানেই পিএইচডি। জ্ঞান-পিপাসা মেটানোর সন্ধান।
মাস্টার্স অবধি আপনি একাডেমি মুখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাই পড়াবে পড়তে হবে। আপনি বাধ্য। কিন্তু পিএইচডিতে আপনি স্বাধীন। একটি বিষয় পছন্দ করবেন। যা আপনার সাধ্যের মধ্যে। সাধ্য বলতে ক্ষমতা বুঝিয়েছি। দর্শনের কেউ নিশ্চই রসায়নে পারদর্শী নয়।
যা-হোক, সে বিষয়ে গবেষণা করবেন। নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন। অভিসন্দর্ভ তৈরী করবেন। এই গবেষণায় আপনাকে একজন গাইড করবে। নির্দেশনা দিবে। যিনি আপনার সিনিয়র। আপনার থেকে ভালো বুঝেন। তাঁর নির্দেশনা ছাড়া চলা দুষ্কর। এরপর আপনার গবেষণা নিয়ে বোর্ড বসবে। তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। আপনার কাজ সঠিক কিনা। সঠিক হলে আপনি ডক্টোর। সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।
মূল কথায় আসি। প্রায়ই একটা কথা শুনি। ইসলাম ইজ দা ফুললি কোড অভ লাইফ। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এখন প্রশ্ন জীবন মানে কি? কখনো ভেবেছেন? বিশাল ফিলোসোফিলাক প্রশ্ন। আমার কাছে, জীবন মানে বিকাশ। বীজ অঙ্কুরিত না হলে কখনোই গাছ হবে না। গাছ না হলে ফুল-ফল-ছায়া আসবে না। এটাই বিকাশ।
একই ভাবে, মানুষ নিজেকে বিকশিত না করলে, সে পঁচনশীল বস্তু ছাড়া কিছুই না। বীজ যেমন পঁচে যায়। কেউ খোঁজও রাখে না।
এখন মানুষের বিকাশ কেমন? মানুষ জন্মায়। সমাজ তাঁকে শিক্ষিত করে। নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবতা ইত্যাদি যোগান দেয়। চারা গাছে যেমন সার-পানি দেয়া হয়। এসব গুণ না থাকলে মানুষ শুধু পশু। পশু এবং মানুষ উভয়ে দেহধারী। উভয়ে পঁচনশীল।
সমাজের নৈতিকতা, মানবতা, মূল্যবোধ আসে কোত্থেকে? ধর্মদর্শন থেকে। মুসলিম সমাজে ইসলাম থেকে। ইসলাম সমাজকে স্কুল বানায়। স্কুলের আইন আছে। আইনের বাহিরে যাওয়া নিষিদ্ধ। ঠিক আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত। এই আইনই হচ্ছে শরিয়া, শরিয়ত। শরিয়ত জীবনের সকল জায়গায় মানুষকে মানুষ হতে নার্সিং করে।
এখন প্রশ্ন, জীবন কয়টা? খাওয়া-ঘুমা-বেঁচে থাকাই কি জীবন? হালাল-হারামের পার্থক্যই কি জীবন? না, জীবন দুটো। ইহকাল এবং পরকাল। ইহকালের জীবনে তো শরীয়ত গাইড করে। কিন্তু পরকালে!
এ পরকাল বা অপার্থিব জীবনের জন্যই মারেফত। শরিয়ত আমাদের মানুষ বানায়। মাস্টার্স পাস করায়। আর পিএইচডি বা জ্ঞানের উন্মুখ রাজ্যে যাওয়ার দরজাই মারেফত।
মাস্টার্সের আগে স্বাধীনতা নেই। কারণ আপনি শিখছেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আপনার তখনো হয় নি। সিদ্ধান্তের ক্ষমতা এলেই স্বাধীন। কারণ শিশুর হাতে আগুন দিলে সে নিজেই পুড়বে। আর স্বাধীনতা তখনি আসে, মানুষ যখন স্রষ্টার সান্নিধ্য পায়। সীমাবদ্ধ সৃষ্টি থেকে অসীম স্রষ্টার স্বাদ পাওয়া। যা মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য।
পিএইচডি করতে গাইড লাগে। মারেফাতে চলতেও গাইড লাগে। এই গাইড হচ্ছেন, মুর্শিদ বা পীর। অবশ্য পিএইচডি বিভিন্ন বিষয়ে হয়। মারেফাতের বিষয় একটি। স্রষ্টাকে পাওয়া। তাহলে মারেফাতে কি গবেষণা করা হয়? মারেফাতে গবেষণা করা হয় পথ, পন্থা, উপায়। কারণ একেক জনের জন্য পথ ভিন্ন। অসীম স্রষ্টা একেক ভাবে ধরা দেয় একেক জনের কাছে।
বলা হয়, সমস্ত মানুষ যত নি:স্বাস নিয়েছে, নিচ্ছে, নিবে - ঠিক তত সংখ্যক পথ আছে স্রষ্টাকে পাওয়ার।
মোটকথা, শরিয়ত মানুষকে পশু থেকে মুমিন বানায়। স্কুল যেমন মূর্খকে শিক্ষিত করে। আর মারেফাত মানুষকে জ্ঞান বা লক্ষ্যের চূড়ান্তে নিয়ে যায়।
ভার্সিটিতে ফ্যাকাল্টি থাকে। এক ফ্যাকাল্টিতে বহু বিষয়। বহু বিষয়ে অসংখ্য পিএইচডি। তেমনি মারেফাতেও ফ্যাকাল্টি বা অনুষদ থাকে। একে বলা হয় তরিকা (Sufi Order)। একটি তরিকায় ভর্তি হন। বায়াত গ্রহন করুন। একটি বিষয় নিন। গবেষণা করুন। নিজেকে জানুন। নিজের পথ চিনুন। স্রষ্টাকে চিনবেন। আপনার গবেষণা সঠিক হলে ডিগ্রি পাবেন। মারেফতে এ ডিগ্রির নাম খেলাফত।
এবার মূলেরও মূল কথা। একটি খেলাফত যথেষ্ট সত্যায়নের জন্য। কেউ যে স্রষ্টার সান্নিধ্য পেয়েছেন এটা তারই প্রমাণ। কিন্তু কেউ যদি একে একে তেরটা বা তারো বেশি খেলাফত পায়, তবে? তাহলে বুঝতে হবে স্রষ্টাকে সে ১৩ বার পেয়েছেন। তেরটা পিএইচডির মত। ভার্সিটির পিএইচডি না। অসীম স্রষ্টাকে পাওয়ার পিএইচডি।
ইমাম আ'লা হযরত একে একে ১৩ টি তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত। তরিকাগুলো হচ্ছে :
1) কাদেরিয়া বারাকাতিয়া জাদীদাহ
2) কাদেরিয়া আবাইয়াহ কাদীমাহ
3) কাদেরিয়া আহদাইয়াহ
4) কাদেরিয়া রাজ্জাকিয়াহ
5) কাদেরিয়া মুনাওয়ারিয়াহ
6) চিশতিয়া নিযামিয়াহ
7) চিশতিয়া সাবরিয়াহ
8) নকশাবন্দি উলাইয়াহ (আবুল উলাইয়া)
9) নকশাবন্দি সিদ্দিকিয়া
10) সোহরাওয়ার্দিয়া কাদীমাহ
11) সোহরাওয়ার্দাহ জাঈদাহ
12) সিলসিলা এ বাদী'আহ
13) সিলসিলায়ে মানামিয়াহ
বেশির ভাগ তরিকায় আ'লা হযরত বায়াত ছিলেন না। কিন্তু সে তরিকতের মাশায়েখগণ উপহার স্বরুপ খেলাফত দিয়েছেন। কবি নজরুল ডক্টোরেট করেন নি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'ডি. লিট' উপাধি দেয়। ডক্টোর অভ লিটারেচার। কারণ তার কর্ম সে যোগ্যতা রাখে।
একইভাবে আ'লা হযরত সব সিলসিলায় বায়াত হন নি। কিন্তু তাঁর কর্ম সব ছাপিয়ে গিয়েছিল। তাঁর যোগ্যতার কারণেই তাঁকে খেলাফত উপহার দেয়া হয়েছে।
শেষ কথা। ভাবুন তো, এই ১৩ জন মাশায়েখ কি মূর্খ ছিলেন। তাঁরা কি জানতেন না, আ'লা হযরত কুফরি করেছেন। কেউ কুফরি করলে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায় কিভাবে? আল্লাহ পর্যন্ত না পৌঁছালে খেলাফত পায় কিভাবে? তখন তো বাপের ছেলে, তাই খেলাফত এমন ছিল না।
জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
মালিক আমাদের বুঝার শক্তি দিক। ধৈর্য দিক। হেদায়ত দিক। ধন্যবাদ।
৫ম-পর্ব

১৫০ বছর আগে। বিমান ছিলনা। না ছিল মোবাইল, টিভি। ইন্টারনেট কল্পনাতেও আসে নি। তখন তথ্য দ্রুত ছড়াতো না। বছরের পর বছর যেত। শতাব্দির পর শতাব্দী। ধীরে ধীরে প্রচার পেত।
কিন্তু ইমাম আ'লা হযরত তো ভিন্ন। তাঁর কর্মজীবন ৫৮ বছর। এ সময়েই তিনি বিশ্বে ছড়িয়েছেন। এ মাথা থেকে ও মাথা। শুধু পাক-ভারতে নয়। শতাব্দী থেকে শতাব্দী লাগে নি। আসুন দেখি কিভাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা। মহাসাগর পেরিয়ে ওপাড়ে। ভারতের বিপরীতে প্রায়। দূরত্ব, ৮,৮৭৩ কি.মি.। ৫,৩১৩ মাইল। ৪,৭৯১ ন্যাটিক্যাল মাইল। বর্তমানে বিমানে ৯ ঘন্টা ৫১ মিনিট লাগে। যদি বিমান ৯০০ কি.মি. প্রতি ঘন্টা উড়ে। তাও বিরতিহীন ভাবে। ১০০ কি.মি. গতিতে গাড়ি চালান। ৩ দিন ১৭ ঘন্টা লাগবে। একজন প্রশিক্ষিত, সুস্থ্য মানুষ দিনে ৩০ কি.মি. হাঁটতে পারে। সে গণিতে ২৯৬ দিনের হাঁটা পথ। ৯ মাস ২০ দিন প্রায়। এ সময়ে পুরো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
যা-হোক, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে ১১১ টি প্রশ্ন এসেছিল বারেলি শহরে। ভারতের উত্তর প্রদেশে। চিঠিতে ভরে। যা 'ফতোয়ায়ে আফ্রিকা' নামে পরিচিত। সেখানের মানুষ ইমাম আ'লা হযরতের কাছে সমাধান নিতেন। ফতোয়া নিতেন। ভাবা যায়!
পর্তুগাল চিনেন? আপনার আশপাশে না। ভূগোলের অন্যপ্রান্তে। বারেলি থেকে ৭,৮৭৮ কি.মি. প্রায়। বিমানে সোয়া আট ঘন্টা। রাস্তাপথে ৩ দিন ২০ ঘন্টা। হাঁটলে আট মাসের বেশি। ২৬২ দিন। তিনটি চিঠি এসেছিল। এবার ভাবুন, আ'লা হযরত এঁর পরিচিত কোথায় পৌঁছেছিল!
বার্মা বা মিয়াননার। ১,৮১১ কি.মি.। রাস্তাপথে ১০০ কি.মি. গতিতে ১৮ ঘন্টার বেশি। দু'মাসের বেশি হাঁটাপথে।
পাকিস্থান। ১,০০৩ কি.মি.। গাড়িতে ১০ ঘন্টার বেশি। লম্বা জার্নি করলে বুঝবেন। দশ ঘন্টা মানে কি। হাঁটলে ৩৪ দিন।
আফগানিস্তান। ১,২৭৬ কি.মি.। গাড়িতে ১৩ ঘন্টা। ৪২ দিন হাঁটলে।
বাগদাদ শরীদ, ইরাক। ৩,৩৮০ কি.মি. বিমানে সোয়া তিন ঘন্টা। রাস্তায় ৩৪ ঘন্টা। হাঁটাপথে ১১২ দিন। তিন মাস ২২ দিন।
মজার তথ্য কি জানেন? আমাদের বাংলাদেশ থেকেও চিঠি গিয়েছে। সমাধান চাওয়া হয়েছে। গুনেগুনে ৭৩ টি প্রশ্ন গিয়েছিল। বাংলা থেকে বারেলি কম দূরত্ব না। সরল রেখায় ১,২১০ কি.মি. ঘুরায় প্যাচায় না। টানা চিল্লা লাগবে হেঁটে পৌঁছালে। মানে চল্লিশ দিন।
একটা মানচিত্র আঁকুন। বারেলি শহর কে চিহ্নিত করুন। এরপর বাকি দেশগুলোতেও চিহ্ন দিন। কি দেখবেন জানেন? দেখবেন বারেলি মাঝখানে। চারদিক থেকে চিঠি আসছে। চিঠির সাথে আশা, প্রত্যাশা, স্বপ্ন। নিজের অজানাকে জানার তৃষ্ণা। একজন মানুষের কাছে পুরোবিশ্বের মানুষের জিজ্ঞাসা।
ঠিক যেমন মৌচাক। রাণী মৌমাছি মাঝে থাকে। তার চারদিকে গড়ে ওঠে সম্রাজ্য। ইমাম আ'লা হযরত এঁরও সম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল, উঠেছে। জ্ঞানের সম্রাজ্য। প্রজ্ঞার সম্রাজ্য। মদিনাপ্রেমের সম্রাজ্য।
আপনাকে স্বাগতম সে সম্রাজ্যে। প্রেমরাজ্যে।

Saturday, 23 June 2018

বিষয়ঃ---তাকলীদ সম্পর্কে ওহাবী,লা মাযহাবী দের উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর?

বিষয়ঃ---তাকলীদ সম্পর্কে ওহাবী,লা মাযহাবী দের উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর

উপস্থাপনায়ঃ--সৈয়দ মোস্তাফা সাকিব

তাকলীদ সম্পর্কে উত্থাপিত আপত্তি এবং উহাদের উত্তর.....
তালীদের বিরােধীতাকারীদের উথাপিত আপত্তি সমূহ দু’ধরণের- কতগুলাে হচ্ছে অবান্তর, বাজে সমালােচনামূলক কিংবা বিদ্রুপাত্মক। এগুলাের উত্তরের প্রয়ােজন নেই। আর কতােগুলাে হচ্ছে প্রতারণামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে গায়র মুকাল্লিদগণ মাযহাবের অনুসারীগণকে ধোঁকা দিয়ে থাকে এবং সাধারণ মুকাল্লিদগণ তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে পড়ে। এ শেষােক্ত প্রশ্নগুলাের উত্তরসহ নিম্নে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলাে।

১নং আপত্তিঃ----তাকলীদ যদি একান্ত প্রয়ােজন হতাে, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম ( رضي الله عنه) কেন কারও তাকলীদ করেন নি? |

উত্তরঃ---সাহাবায়ে কিরাম ( رضي الله عنه) এর কারাে তাকলীদ করার প্রয়ােজন ছিল না। তাঁরা হযুর ﷺ সাহচর্য প্রাপ্ত হওয়ায় সমস্ত মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা বা ইমাম হিসেবে গণ্য। ফলস্বরূপ ইমাম আবুহানীফা (رحمة الله عليه) , শাফিঈ (رحمة الله عليه)  প্রমুখ। ধর্মীয় ইমামগণ তাঁদেরই অনুসরণ করেছিলেন।

 মিশকাত শরীফের "ফাযাইলুস সাহাবা” অধ্যায়ে আছে:
أصحابي كالنجوم بأيهم اقتديتم اهتديتم
. (অথ্যাৎ আমার সাহাবীগণ তারকারাজির মত। তােমরা যে কারাে অনুসরণ করা না কেন, সঠিক পথের সন্ধান পাবে।)
উল্লেখিত হাদীছ গ্রন্থের একই অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছেঃ-
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين
. অর্থাৎ-তোমরা আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নতকে আকড়ে ধর।

উথাপিত আপত্তিটার দৃষ্টান্ত হলাে, যেমন কেউ বলতে পারে আমরা কারাে উম্মত নই। কেননা আমাদের নবী ﷺ কারাে উম্মত ছিলেন না। সুতরাং উম্মত না হওয়াটা রসুল ﷺর সুন্নত। এর উত্তরে বলতে হবে-হুজুর ﷺ.. নিজেই নবী, সবাই তাঁর উম্মত। অতএব, তিনি কার উম্মত হবেন?

 তদ্রুপ সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হলেন সবার ইমাম। সুতরাং তাঁদের ইমাম আবার কে হবে?


 ঐ শষ্য ক্ষেতেই নদী-নালা থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, যার অবস্থান সাগর থেকে অনেক দুরে। মুকাবিরের তাকবীর শুনে ঐ সকল মুক্তাদীরাই নামায পড়েন, যারা ইমাম থেকে দুরে থাকেন। সাগর পাড়ের নিকটে অবস্থিত শষ্য ক্ষেতের জন্য নদী-নালার পানির প্রয়ােজন হয় না। আর প্রথম কাতারের মুক্তাদীগণের জন্য মুকাবিরের প্রয়ােজন পড়ে না। সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) হচ্ছেন প্রথম কাতারের মুক্তাদী। তীরা কোন মাধ্যম ব্যতিরেকে সরাসরি হযুর ﷺ পবিত্র সিনা মুবারক থেকে ফয়েয প্রাপ্ত। আমরা যেহেতু ঐ সাগর (হযুরেরﷺ সিনা মুবারক) থেকে অনেক দুরে, সেহেতু আমাদেরকে খালের মুখাপেক্ষী হতে হয়। সাগর থেকে হাজার হাজার নদীর উৎপত্তি হয়, সে গুলােতে একই সাগরের পানি প্রবাহিত হয় বটে কিন্তু নাম ও গতিপথ ভিন্ন ভিন্ন। কোনটাকে গংগা, কোনটাকে যমুনা বলা হয়। অনুরূপ, হুযুর ﷺ হলেন রহমতের সাগর। তাঁর সিনা মুবারক থেকে যে নদী উৎপত্তি হয়ে ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله عليه) এর পবিত্র বক্ষ মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে হানাফী নামকরণ করা হয়েছে, আর যেটি ইমাম মালিক (رحمة الله عليه) এর সিনা মুবারক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, উহাকে মালিকী মাযহাব বলা হয়েছে। সব নদীর পানি এক ও অভিন্ন, কেবল নাম ভিন্ন ভিন্ন। ঐ সব নদীর পানির প্রয়ােজন হয়েছে আমাদের, সাহাবায়ে কিরামের (رضي الله عنه) নয়। যেমন হাদীছের সনদ বা সূত্রের প্রয়ােজনীয়তা অনুভুত হয় আমাদের নিকট সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)এর নিকট উহার আদৌ প্রয়ােজন নেই।

২য় আপত্তিঃ---
 সঠিক পথের সন্ধানের জন্য কুরআন ও হাদীছই যথেষ্ট। কুরআন হাদীছে এমন কি বিষয় নেই, যার জন্য ফিকহের সাহায্য নিতে হবে? কুরআনেই ইরশাদ করা হয়েছেঃ
( وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ)
[Surat Al-An'am 59]
(আদ্র বা শুষ্ক এমন কোন কিছু বাকী নেই, যা ঐশীনূরে আলােকিত কুরআনের মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়নি) আরও বলা হয়েছে।
(وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ)
[Surat Al-Qamar 17]
(আমি কুরআনকে শেখার বা স্মরণ রাখার বা মুখস্থ করার সুবিধার্থে সহজ করে দিয়েছি। স্মরণ করার কেউ আছে কি?)

এ আয়াত সমূহ থেকে বােঝা গেল, কুরআনের মধ্যে সব কিছু আছে এবং কুরআন প্রত্যেকের জন্য সহজ। তাই মুজতাহিদের নিকট যেতে হবে কি জন্য?

উত্তরঃ----
 হিদায়তের জন্য কুরআন ও হাদীছ নিঃসন্দেহে যথেষ্ট। এও ঠিক যে | কুরআন-হাদীছের মধ্যে সব কিছু আছে। কিন্তু এ থেকে মাসাইল বের করার উপযুক্ততা

থাকা চাই। সমুদ্রে অনেক মনিমুক্তা রয়েছে। এ গুলাে খুঁজে আনার জন্য ডুবুরীর প্রয়ােজন। ইমামগণ হলেন সমুদ্রের ডুবুরীর মত। চিকিৎসা শাস্ত্রের গ্রন্থাবলীতে সব | কিছুর উল্লেখ আছে; তবুও আমাদেরকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়, ব্যবস্থাপত্র নিতে হয়। ধর্মীয় ইমামগণই হলেন আমাদের ডাক্তার সদৃশ। আর কুরআনের আয়াত. (وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ)
[Surat Al-Qamar 17]
 এ বলা হয়েছে "কুরআনকে স্মরণ রাখার জন্য বা হিফজ করার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে;"

 মাসাইল বের করার ক্ষেত্রে সহজ করে দেয়া হয়নি।
 যদি মাসাইল বের করা এতাে সহজ হয়, তাহলে হাদীছের কি প্রয়ােজন থাকতে পারে? কুরআনের সবকিছু আছে আর কুরআন সহজও। তবুও কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী (দঃ) কেন এলেন? কুরআনেই আছে
 وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِم
[Surat Al-Baqarah 129]
(অর্থাৎ সেই নবী তাদেরকে আল্লাহর কালাম ও জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা দেন।)
 কুরআন ও হাদীছ হলাে রূহানী অষুধ, আর ইমাম হলেন রূহানী ডাক্তার।

৩য় আপত্তিঃ----- কুরআন শরীফে মাযহাবের অনুগামীদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ
[Surat At-Tawbah 31]
(ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পাদরী ও ঋষিদেরকে খােদা মেনে নিয়েছে) আরও বলা হয়েছেঃ
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ
[Surat An-Nisa' 59]
যদি তােমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে ঝগড়া-ঝাটি হয়, সেটার মীসাংসার জন্য আল্লাহ ও রসুল (আলাইহিস সালাম) এর শরণাপন্ন হও।।

আরও ইরশাদ করা হয়েছেঃ
وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ
[Surat Al-An'am 153]

(এটাই হলাে আমার সরল পথ। এ পথেই চলল। অন্যান্য পথে চলিও না, অন্যান্য পথে গেলে এ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে।)

আরও ইরশাদ করা হয়েছেঃ
قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا
[Surat Al-Baqarah 170]
(তারা বলে-আমরাতাে ওই পথেই চলবাে, যে পথে আমাদের বাপ-দাদাদেরকে চলতে দেখেছি।)

এ সমস্ত আয়াত ও এ ধরণের অন্যান্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশের সামনে ইমামগণের নির্দেশ অনুযায়ী চলা কাফিরদেরই অনুসৃত পন্থা। সহজ সরল পথ একটিই। শাফেঈ, হানাফী, ইত্যাদি পথ চতুষ্টয় হলাে বাঁকা পথ।

উত্তরঃ------ কুরআন করীম যে তাকলীদের নিন্দা করেছে, সেই সম্পর্কে আমি এ গ্রন্থের ১ম অধ্যায়ে আলােচনা করেছি। কুরআনের -
(وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ )
[Surat Al-An'am 153]
আয়াত (অন্যান্য পথে চলিও না) দ্বারা ইহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ ইত্যাদি ইসলাম বিরােধী মতাদর্শকে বােঝানাে হয়েছে, আর হানাফী, শাফেঈ ইত্যাদি কয়েকটি পথ নয়, বরং একই ষ্টেশনগামী চারটি সড়ক বা একই নদী হতে উৎপন্ন চারটি খাল। তা না হলে গায়র মুকাল্লিদদের মধ্যে ছয়ী’ ও ‘গযনবী নামে যে দুটো দল রয়েছে, সে সম্পর্কে কি বলা হবে? ভিন্ন ভিন্ন পথের প্রশ্ন একমাত্র ‘আকাইদ বা বিশ্বাসের বিষয় বস্তু সমূহের পরিবর্তনের সহিত সম্পৃক্ত। চার মাযহাবের আকীদাহ এক। আমলের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের ব্যাপারটিও গৌণ। এ ধরণের মতভেদ স্বয়ং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যেও বিরাজমান ছিল।

Monday, 28 May 2018

আপনি কি জানেন এক জন লুঠতরাজ কিভাবে হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদ্বি-আল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে গেলেন???

আপনি কি জানেন এক জন লুঠতরাজ কিভাবে হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদ্বি-আল্লাহু তায়ালা আনহু হয়ে গেলেন???
=================================

হযরত ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু | তাঁর নাম আবু আলী ফুজাইল ইবনে আয়াজ রাদিআল্লাহু আনহু . সমরকন্দে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রারম্ভে মাঠে-প্রান্তরে লুটতরাজ করতেন । ১৮৭ হিজরি সনে মক্কায় ওফাত লাভ করেন। জীবনের সূচনাপর্বে এক ব্যক্তি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেন:

 و ألم يأن للذين اموا أن تخشع قلوبهم لذكر الله في

" ঈমানদার জন্য কি এ সময় এখানাে আসেনি,তাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরের ভয়ে ঝুঁকে যাবে?"

এ আয়াতটি তার অন্তরকে এভাবে প্রভাবিত করল, যেন কেউ বর্শা নিক্ষেপ করল । তিনি অনুতাপ-অনুশােচনা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এই লুটতরাজের খেলতামাশা আর কতদিন চলবে! এখন ঐ সময় এসে গেছে, আমরা যেন আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে পড়ি। একথা বলে অঝাের ধারায় কাঁদতে লাগলেন। এরপর হতে রিয়াজত-মুহাদায় একাগ্র হয়ে গেলেন।

কারাে মতে, তার তাওবার কারণ এটি যে, তিনি একটি মেয়েকে ভালােবাসতেন। একবার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে তার কাছে যাচ্ছিলেন। (তখন) কানে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ আসল:

و ألم يأن للذين اموا أن تخشع قلوبهم لذكر الله في

‘"ঈমানদার জন্য কি এ সময় এখানাে আসেনি, তাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরের ভয়ে ঝুকে যাবে?"

এর উত্তরে তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! হ্যা, আমি এসে গেছি। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে একটি বিজন প্রান্তরে রাত কাটালেন। সেখানে কিছু মুসাফির ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন, এখান থেকে চলে যাও। তাদের মধ্য হতে কেউ কেউ বলল, এখানে সকাল পর্যন্ত থাকব। কারণ রাস্তায় ফুজাইল ইবনে আয়াজ থাকবে। সে লুটপাট করবে। তাদের কথার উত্তরে তিনি বললেন, সে তাওবা করেছে। অতঃপর তাদেরকে নিরাপত্তা দিলেন । তিনি আল্লাহ ও নবীর অনুসরণ এবং তাকওয়া ও ইবাদতের রাস্তা অবলম্বন করলেন। রিয়াজত-মুশাহাদায় বড় কামালিয়ত অর্জন করলেন।

হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলতেন, আমি নিজ কানে হযরত ফুজাইলকে একথা বলতে শুনেছি যে, দুনিয়া অনুসন্ধানীরা অপমাণিত ও লাঞ্ছিত হয়। যখন আমি নিজের জন্য কিছু উপদেশের আরজ করলাম, তখন তিনি বললেন, খাদেম (সেবক) হও, মাখদুম (সেবা গ্রহণকারী) হয়ােনা। কেননা, খাদেম হওয়াই হচ্ছে সৌভাগ্যের কারণ । তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যথাযথভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছে, সে নিজের পুরাে শক্তি-সামর্থ মতে আল্লাহর ইবাদত করে। কেননা তার পরিচয় তার অনুগ্রহ ও করুণার পরিচয় দ্বারা অর্জন হয় । যখন ঐ ব্যক্তি তাঁর করুণার-অনুগ্রহের সাথে পরিচয় হয়ে যায়, তখন সে তাকে বন্ধু বানিয়ে নেয় আর যখন বন্ধু বানিয়ে নেয়, তখন পুরাে সামর্থ ও শক্তি অনুযায়ী তার আনুগত্য ও ইবাদত পালন করে। কেননা বন্ধুর কোন কাজ কঠিন নয়। এ ভিত্তিতে যে পরিমাণ বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পাবে, সে পরিমাণ আনুগত্য ও ইবাদতের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পাবে আর বন্ধুত্বের প্রাবল্য হচ্ছে মারিফাতের হাকীকত।

 জনৈক কারী সাহেব তার সামনে খুবই চমৎকার কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করলেন। তখন তিনি বললেন, আমার বাচ্চাদের কাছে গিয়ে তেলাওয়াত করাে। কিন্তু সূরা আল-কারিয়া কখনাে পড়বেন না। কেননা, খােদাভীতির কারণে তারা কিয়ামতের আলােচনা শুনার শক্তি রাখেনা। কিন্তু কারী সাহেব সেখানে গিয়ে এ সূরাটি পড়লেন। তার সাহেবজাদা একটি চিৎকার দিলেন এবং দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন।

কথিত আছে যে, তাকে ৩০ বছর পর্যন্ত কেউ হাসতে দেখেনি। কিন্তু যখন তার প্রিয় সন্তান ইহকাল হতে বিদায় নিল, তখন মুচকি হাসি দিলেন । লােকেরা যখন হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করল, তিনি বললেন, আমি দেখেছি যে, আল্লাহ তা'আলা তার পরকালের দিকে যাত্রা দ্বারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। সুতরাং আমিও তার সন্তুষ্টিতে খুশি হয়েছি।

ফুজাইল ইবনে রবি বর্ণনা করেন যে, আমি হারুনুর রশিদের সাথে মক্কা মুকাররমায় উপস্থিত ছিলাম। হজ্বের কাজ সমাধা করার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কোন বুযর্গ ব্যক্তি আছে কিনা, যাতে তার সাক্ষাত লাভ করতে পারেন। (তৎকালীন যুগের লােকেরা মক্কা মুয়াজ্জমার মধ্যেও আহলুল্লাহদের অনুসন্ধানে থাকত।) আমি বললাম, হ্যা। সুতরাং আমি তাকে হযরত ফুজাইলের নিকট নিয়ে গেলাম। তখন তিনি নির্জনতায় বসেছিলেন। নিচে নেমে দরজা খুলে দয়ে প্রদীপ নিভিয়ে দিলেন এবং কক্ষে দণ্ডায়মান হয়ে গেলেন। হারুনুর রশিদ সরে চলে আসলেন। যখন হযরত ফুজাইলের হাত হারুনুর রশিদের হাত স্পর্শ করল, (ফুজাইল) তখন বললেন, ‘আফসােস! এরূপ তুলতুলে হাত আমি দেখিনি। এরূপ হাত যদি আল্লাহর আযাবে নিমজ্জিত হয়ে যায়, তাহলে খুবই তাজ্জবের পার। একথা শুনে হারুনুর রশিদের মধ্যে ভীতি ও বিনয়ভাব সৃষ্টি হল এবং তিনি এ পরিমাণ ক্রন্দন করলেন যে, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন । যখন সংজ্ঞা ফিরে আসেন তখন বলতে লাগলেন, হে ফুজাইল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। হযরত ফজাই বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন, তােমার পিতা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আবেদন করলেন যে, আমাকে নিজ সম্প্রদায়ের আমির বানিয়ে দিন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা! আমি তোমাকে তােমার প্রাণের আমির বানিয়ে দিয়েছি। কেননা, তােমার একটি মুহূর্ত আল্লাহর আনুগত্যে কাটিয়ে দেয়া এ বিষয়টি হতে উত্তম যে, লােকেরা হাজার বছরধরে তােমার আনুগত্য করবে। কেননা, কিয়ামতের দিন বাদশাহী ও আমিরী শুধু দুঃখ ও লজ্জা ছাড়া আর কিছু পাবেনা। অতঃপর হযরত ফুজাইল বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন! কখনাে যেন এরকম না হয় যে, তােমার এই সুন্দর চেহারাটি দোযখের আগুনে পাকড়াও হয়ে যায়। অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখে এবং তারই হক উত্তম পন্থায় আদায় করাে। এরপর হারুনুর রশিদ বললেন, আপনার ওপর কিছু ঋণের বােঝা রয়েছে। তিনি বললেন, হ্যা, আল্লাহর ঋণ আমার গর্দানের ওপর রয়েছে আর তা হচ্ছে তার আনুগত্য আর যদি তিনি এর জন্য আমাকে পাকড়াও করেন, তাহলে তা হবে আমার জন্য দুর্ভাগ্য।

তিনি বলেন, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে লৌকিকতা হতে বাঁচতে পারেনা। আমরা এরূপ মানুষও দেখেছি, যে স্বীয় আমলে লৌকিকতা প্রদর্শন করে। কিন্তু এখন এরূপ মানুষও দেখা যাচ্ছে, যারা ঐ সব আমলের ব্যাপারে অহংকার করে, যা তারা করেও না। তিনি বলেন, আমি যখন দুনিয়াকে কারাে সাথে খেলা করতে দেখি, তখন আমার কান্না এসে যায়। যদি কুরআন-হাদীসের ধারক-বাহকরা দুনিয়া বিমুখতার ওপর ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে মানুষেরা তাকে অপমানিত মনে করেনা। কিন্তু আফসােস একথার ওপর যে, যখন কেউ বলে, অমুখ আলেম বা অমুখ আবেদ অমুখ ব্যবসায়ীর খরচে হজ্বে গেছেন । তিনি বলেন, যদি তােমরা কোন আলেম বা আবেদকে দেখ যে, তারা রাজাবাদশা বা দুনিয়াদারের নিকট নিজেদের প্রশংসা শুনে সন্তুষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বুঝে নাও যে, সে রিয়াকারী আর রিয়াকারীর একটি আলামত হচ্ছে যে, তার ইলম হবে। তাে পাহাড়সম, কিন্তু আমল হবে ধূলিকণাসম ।।

হযরত মালেক ইবনে দিনার রাদিআল্লাহু আনহু ও দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য ইবাদত,ও উপদেশ।
[[আমাদের জন্য নমুনাস্বরূপ যা থেকে শিক্ষা নিতে হবে]]
================================

হযরত মালেক ইবনে দিনারের তাওবার সূচনা এভাবে যে, একরাত তিন একটি গানের দলে গান বাজনার মাহফিলে উন্মত্ত ছিলেন। যখন সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন বেহালা হতে এ আওয়াজ বের হল, ?

يا مالك مالك الابتوب
 (হে মালেক তােমার কি হল, কতক্ষণ পর্যন্ত তাওবা না করে থাকবো?)
তখন তিনি পপিকার্য হতে বেরিয়ে আসলেন এবং ইমাম হাসান বসরীর দরবারে গিয়ে তাওবা করে নিজের অবস্থা সংশােধন করে নিলেন।

হযরত মালেক ইবনে দিনার দামেস্কে হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক নির্মিত মসজিদে ই'তিকাফ নিতেন। একদিন তার মনে আসল যে, এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যাক, এর দ্বারা আমাকে এই মসজিদের মুতাওয়ালি বানিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং তিনি ইতিকাফ নিলেন এবং সারা বছর এত অধিক পরিমাণ নামাজ পড়লেন যে, লােকেরা তাকে সর্বদা নামাজে ব্যস্ত দেখতেন । কিন্তু কেউ তার প্রতি মনােযােগ দিল না। একবছর পর যখন তিনি মসজিদ হতে বিদায় নিলেন, তখন গায়েব হতে আওয়াজ আসল, হে মালেক! এখন তোমাকে নিজ স্বার্থপরতা হতে তাওবা করতে হবে। সুতরাং একবছর পর্যন্ত নিজ স্বার্থপরতামূলক ইবাদতের ওপর খুবই দুঃখিত ও লজ্জিত হলেন । তিনি নিজ আত্মাকে লৌকিকতা ও স্বার্থ হতে মুক্ত করে একনিষ্ঠ নিয়তে একরাতে ইবাদত করলেন। সকালে দেখতে পেলেন যে, মসজিদের সামনে মানুষের একটি সমাবেশ হয়েছে, যারা পরস্পর বলাবলি করছে যে, মসজিদের ব্যবস্থাপনার কাজ ঠিক নেই। সুতরাং ঐ ব্যক্তিকে (মালেক) মসজিদের মুতাওয়াল্লি বানিয়ে দেয়া হোক। এই সিদ্ধান্তে সকলে ঐক্যমত হয়ে যখন তার নিকট গেল এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাকে অবগত করল, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আমি একবছর পর্যন্ত লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদতে এজন্যই নিমজ্জিত ছিলাম যে, মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব যেন আমার হাতে এসে যায়, কিন্তু তা পূর্ণ হয়নি। বর্তমানে যখন আমি সত্যদিলে তোমার ইবাদতে ব্যস্ত হয়েছি, তখন তোমার নির্দেশে সমস্ত লােকেরা আমাকে মুতাওয়ালি বানানোর জন্য এসেছে এবং কাঁধে এ দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করছে । কিন্তু তােমার মাহাত্মের শপথ করছি যে, আমি এখন না তাে মুতওয়ালির দায়িত্ব গ্রহণ করব, আর না মসজিদ থেকে বের হব। একথা বলে আবার ইবাদতে বিভাের হয়ে গেলেন।

খােদাভীতির এ অবস্থা ছিল যে, তিনি যখন ::
إياك نعبد وإياك نستعين
আয়াতটি নামাজে পড়তেন, তখন ব্যাকুল হয়ে ক্রন্দন করতেন এবং বলতেন যে, এটি যদি কুরআনের আয়াত না হত, তাহলে আমি তা কখনাে পড়তাম না। কেননা, এর অর্থ এটি যে, হে আল্লাহ, আমরা তােমারই ইবাদত করি এবং তােমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি। অথচ আমরা তাে শুধু প্রবৃত্তির পূজারী এবং মানুষের নিকট হতে সাহায্যের প্রত্যাশী। তিনি বলেন, যার দ্বারা কিয়ামতের দিন কোন উপকার হবেনা, তার সাহচর্য দ্বারা কি লাভ। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, আলাহর প্রদত্ত তাকদীরের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও, যাতে তুমি হাশরের আযাব হতে মুক্তি পেতে পার।






Featured post

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজের বর্ননা।।

  সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম Madina Madina Madina   আমরা এই নামাজ কেন পড়ব?  কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে, অর্...