Wednesday, 31 October 2018

দীপ্ত সূর্যের গুপ্ত আলো 🖋 লিখেছেন - মেহেদী গালীব ( Mahdi Galib)

দীপ্ত সূর্যের গুপ্ত আলো  
🖋 লিখেছেন - মাহদী গালীব ( Mahdi Galib)


Image may contain: text


১ম পর্ব
আমরা দেখি কি দিয়ে? আলো দিয়ে। আলো যত উজ্জ্বল, দেখব তত বেশী। সবচে উজ্জ্বল কি? উত্তর, সূর্য। দুপুরের সূর্য। কিন্তু আমরা সূর্যকেই দেখতে পাই না। চোখে সয় না। মাধ্যম লাগে, চশমা লাগে। আজব না!
আজ এমনি সূর্যের কথা লিখব। একের পর এক। যাঁকে বুঝতে-দেখতেও মাধ্যম লাগে। এ মাধ্যমের নাম, বিবেক। যিনি সূর্যের মত প্রকাশিত। অবুও অদেখা। অযোগ্যতা আমাদের। তাঁকে পেয়েও পাই নি।
১৪ জুন ১৮৫৬। ২৮ অক্টোবর ১৯২১। ৬৫ বছর ৪ মাস, ১৫ দিন। ২৩,৮৭৭ : তেইশ হাজার আটশত সাতাত্তুর দিন।
গ্রন্থ সংখ্যা পনেরো শতাধিক। হিসেবের সুবিধায় ধরলাম দেড় হাজার। এবার 'দিন' এবং 'বই-সংখ্যা' ভাগ করি।
২৩,৮৭৭ ÷ ১,৫০০ = ১৫.৯১৮ (প্রায় ষোল দিন)।
থামুন। একটু ভুল হচ্ছে। আট বছরে তাঁর প্রথম বই। অতএব, আগের সাত বছর বাদ, ৬৫-৭। ফলাফল, ৫৭ বছর ৪ মাস ১৫ দিন । ২০,৮০৫ : বিশ হাজার আটশ পাঁচ দিন। লিপ ইয়ার ধরি নি। এবার ভাগ করি।
২০,৮০৫÷১,৫০০ = ১৩.৮৭ ( প্রায় চোদ্দ দিন) মানে চোদ্দ দিনে একটি বই লেখা হয়েছে।
আচ্ছা, দেড় হাজার বইয়ে মোট পাতা কত? তবে একদিনে কত পাতা লিখেছেন? ঘন্টায় কত? খোদার কসম জানি না। কল্পনাতেও আসে না।
ছোটতে রচনা পড়েছি। গরুর রচনা। 'কাউ ইজ আ ডোমেস্টিক এনিমেল'। আধ মাস যুঝেছি। মুখস্থ হয় নি। আর আধ মাসে একটা বই লেখা! মাসে দুইটা। থুক্কু! আটাশ দিনে।
সে বই কি রকম? না, 'আম পাতা জোড়া জোড়া' বই না। মহাকাশে কোটি নক্ষত্র। লক্ষ গ্রহ-উপগ্রহ। সব ছুটছে। প্রভাব রাখছে পৃথিবীতে। এইসব ছোটাছুটির হিসেব রাখে জ্যোতির্বিজ্ঞান। তিনি সেই আলোকবর্ষের হিসেব লিখেছেন।
সমাজবিজ্ঞান। আগে মানবিক বিভাগে ছিল। ক'বছর আগেই আলাদা হল। নতুন ফ্যাকাল্টি খুলল। অথচ তিনি শত বছর আগেই সমাজ বিজ্ঞানের ওপর লিখেছেন। জ্ঞানের স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গণিতে দশের ওপর পাই নি। ম্যাট্রিকের টেস্টেও। একুব-বেকুবের সূত্র আজও বুঝি না। তিনি গণিতের সব শাখায় লিখেছেন। এমনকি প্রাইম নাম্বার নিয়েও। গণিত বিভাগের প্রধানও তাঁর থেকে সমাধান নিত।
আমি যাযাবর। জেলায়-থানায় ঘুরি। কত গাছ যে দেখি। প্রায় কিছুই চিনি না। বোটানির ছাত্রদের জিজ্ঞেস করি। তারাও জানে ন। অথচ তিনি গাছ-গাছরার ওপর বিশাল গ্রন্থ লিখে বসে আছেন। শত বছর আগেই। গাছ থেকে ওষুধ হয়। একে ভেষজবিদ্যা বলে। তিনি ভেষজবিদ্যাও লিখেছেন। 'হামদার্দ-বিশ্ববিদ্যালয়' তাঁর লেখার ওপর গবেষণা করেছে। স্বীকার করেছে তাঁর পাণ্ডিত্য।
ভাষা বড় অদ্ভুত। প্রতি তিন মাইলে ভাষা পালটায়। 'খাইছো' হয় 'খাইছুন'। একে বলে ধ্বনিতত্ব। তিনি এর ওপরেও লিখেছেন। তাঁর প্রথম বই আরবী ব্যাকরণে ওপর।
আমি কবিতা লিখি। কবিতার আইন আছে। অনুপ্রাস, অন্তমিল, স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত - আরো মেলা কিছু। অত জানি না, মানিও না। অত মানলে কবিতা লেখাই অসম্ভব। আমার অযোগ্যতা। আর তিনি এসব আইনের মাস্টার ছিলনে। এবং স্রষ্টাও ছিলনে। এ আইনকে বলে বালাগাত, অলংকরণশাস্ত্র।
সব কিছু ছাপিয়ে ছিল তাঁর ফতওয়া। আমাদের সমাজে 'ফতওয়া' শব্দটা ব্যাকডেটেড। খ্যাত-খ্যাত শুনায়। যদিও বিষয়টা বিপরীত। আম্মা বলেন, 'ভাল্লুকের হাতে কোদাল'। ভাল্লুকের হাত ছোট। কোদাল না ধরতে পারে। না কোপাতে পারে। হাস্যকর অবস্থা। ঠিক তেমনি মূর্খ (সম)কওমী সম্প্রদায় ফতওয়াকে বাজারে শব্দ বানিয়েছে।
ফতওয়া মানে আইন। মুফতি সাহেব ফতওয়া দেন। মুফতি মানে আইন নির্ধারক। আইন প্রণেতা না। এবার ভাবুন তো, সুপ্রিমকোর্টের জজ সাহেবের মর্যাদা। যেকোনো জজের মর্যাদা। তারা কি আমজনতা? আমাদের মত? আফসোসের বিষয়, ভাল্লুকের মতই এদেশে চামড়া-চান্দা তুলে খাওয়ারা বিষাক্ত ছত্রাকের মত মুফতি আর ফতওয়ার জন্ম দিচ্ছে।
তাঁর লিখা ফতওয়া গ্রন্থ 'ফওয়ায়ে রেজভিয়া'। মোট তিরিশ খণ্ড। প্রতি খণ্ড গড়ে ৭০০ পাতা। মোট একুশ হাজার পাতা। বিয়াল্লিশ হাজার পৃষ্ঠা। মানবজীবনের সব আছে এতে।
তাঁর ফতওয়া ছিল যুগান্তকারী। জেনে অবাক হবেন, আপনার মানিব্যাগে যে টাকার নোট, সেটা তাঁর বদৌলতেই পেয়েছেন। তাঁর বদৌলতেই এখনো ৯৯.৯০% মুসলিম উদার, মানবিক।
আল্লাহ বলেন : হে মানব জাতী, তোমরা বড়ই তাড়াহুড়ো। আমাদের ধৈর্য কম। তাই লেখা বাড়াচ্ছি না। আজকের সমাপীকা টানছি।
তিনি দুই ঘন্টা ঘুমাতেন। বাইশ ঘন্টা কাজ করতেন। বেশি সময় লেখালেখি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? তাঁরও সংসার ছিল। আয়-রোজগার ছিল। এত লিখতেন কিভাবে? মাসে দুইটা বই। যার জন্য আলাদা ছাপাখানাই দেয়া হয়েছিল।
তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করা হল : আ'লা হযরত! এত কিভাবে লিখেন? তিনি হাসলেন। স্নিগ্ধ তাবাসসুম। বললেন, কলম দিয়ে লেখা হয়। তাই বলে কলম কি লিখতে পারে? না, যিনি কলম ধরেন তিনি লেখেন। জেনে রাখো, আমি আহমাদ রেযা একটি কলম মাত্র। আর আমাকে ধরে যিনি লিখছেন, তিনি বাগদাদ ওয়ালা। তিনি আমার গাউসে পাক!


২য়পর্ব

অর্থনীতি, ইকোনোমিক্স। ভার্সিটির একটি সাবজেক্ট। অর্থনীতি ও মানুষ অবিচ্ছেদ্য। ফ্যাল কড়ি মাখ তেলের মত। কড়ি বা অর্থ নেই, তেলও নেই। ১৯৪০ থেকে অর্থনীতিকে একটি বিষয় বিবেচনা করা হল। এর আগে সভ্যতা জানতও না। অথচ, ১৯১২ সালে অর্থনীতির বই লিখেন ইমাম আ'লা হযরত। অর্থনীতিকে স্বতন্ত্র সংজ্ঞায়িত করেন। পশ্চিমাদেরও ২৮ বছর আগে। প্রবর্তন করেন যুগান্তকারী পলিসি।
অবশ্য, এডাম স্মিথ অনেক আগেই একটা বই লিখেন। 'ওয়েলথ অভ নেশন' নামে। সেটা মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর। যা খুলে দিয়েছিল পুঁজিবাদ ও সম্রাজ্যবাদীদের দরজা। মানুষের রক্তচোষা অধ্যায়। 'মুক্তবাজার অর্থনীতি', ফ্রিম্যাসন, 'নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার' এবং ইজরাইল একসূতোয় গাঁথা। যার ঘোরতর বিরোধী আ'লা হযরত। একমাত্রও বলা যায়। সে এক বিশাল অধ্যায়। আরেকদিন বলব।

আ'লা হযরত চারটি সূত্র উপস্থাপন করেন।

(i) সঞ্চয় বা সেভিংস।

(ii) ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন।

(iii) মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য।
(iv) ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ।


সঞ্চয় বা সেভিংস :
ধরুন একশ টাকা আছে। ৮৫ টাকা খরচ করলেন। বাকি ১৫ টাকা জমাবেন। যা ধীরে ধীরে বড় হবে। কিস্তির পর কিস্তিতে। এক সময় সে অর্থ আপনি বিনিয়োগ করবেন। আপনার আর্থিক অবস্থা বদলাবে। কথাটা খুব সাধারণ মনে হয়। কিন্তু শত বছর আগের কথা ভাবুন। মানুষ তো অর্থনীতিকেই চিনত না। সেভিংস তো দূর কি বাত। আজকের গরিব দেশগুলোর সঞ্চয় ৫-৮%। আর উন্নত দেশের ১৫% বা বেশি। তাহলে বুঝুন সঞ্চয় কিভাবে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৩৬ সাল। ইংল্যাণ্ডের লর্ড জে. এম কায়নেয 'থিওরি ওভ সেভিংস এণ্ড ইনভেস্টমেন্ট' প্রকাশ করে। যা হুবহু আ'লা হযরতের থিওরি। এজন্য বৃটিশরা তাকে 'লর্ড' উপাধিও দেয়। সম্মানিত করে।
এবার ভাবুন। কার বিয়ে কে পরে মালা! কার আবিষ্কার কে পায় পুরষ্কার।
আরেকটা কথা, আ'লা হযরত নাকি বৃটিশদের দালাল! যদি তাই হয়, তবে বৃটিশরা আ'লা হযরত কে কেন পুরষ্কৃত করল না? কেন এমন অবিচার? আফসোস! শত্রুরা মুসলিমের জ্ঞান কাজে লাগায়। আর আমরা তাঁকে চিনলামও না এখনো (আল্লাহ ন্যায় বিচারক)।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রণয়ন :
সে যুগে ব্যাংক ছিল হাতেগোনা। এর সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয় ছিল না। আ'লা হযরত মুসলিমদের ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। প্রথম সূত্র ছিল সঞ্চয়। এখন ব্যাংক না থাকলে মানুষ জমাবে কোথায়? বলে রাখি, বর্তমান ব্যাংক আর আ'লা হযরত এর ব্যাংকের ব্যাপক তফাত। যা সুদহীন। শরীয়া সমৃদ্ধ। অনেকটা নিরাপদ সিন্দুকের মত। মানুষ জমাবে, ব্যাংকে বেতন দিবে অর্থ রক্ষার জন্য।
এই ব্যাংকি ব্যবস্থার কারণে মানুষ সঞ্চয়মুখি হবে। বাড়বে অর্থের প্রবৃদ্ধি। অল্প পরিসরে বুঝানো কষ্টকর। মালিক আমাদের অনুমানের শক্তি দিক।
মুসলিম-মুসলিম বাণিজ্য :
এখানে বলা হয়, একজন মুসলিম শুধু মাত্র মুসলিমের সাথেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। এতে মুসলিমের অর্থ মুসলিমের কাছেই থাকবে।
এখন ভাবতে পারেন, আ'লা হযরত সংকীর্ণমনা। তিনি বাকিদের ঘৃণা করতেন।
থামুন! গভীরে যান, ডুব দিন। মুসলিমদের শোচনীয় অবস্থা তখন। উসমানীয়দের পতন হচ্ছে। ভারতে বৃটিশ লুটছে। ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। প্রশ্নটা ছিল মুসলিমদের অস্তিত্বের। বেঁচে থাকার। একটা উদাহরণ দেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ। ইউরোপে ভয়াবহ অবস্থা। মানুষ না খেয়ে মরে। তারা তখন 'ইউরোপীয় কমন মার্কেট' (E. M. C.) বানায়। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যেই ব্যবসা করত। বাকিদের সুযোগ ছিল না।
আজকে তাদের অবস্থা কোথায়? বিশ্বে সবচে উন্নত অঞ্চল। আফসোস! আ'লা হযরত এর থিওরি তারা ব্যবহার করে। আর আমরা তাঁকে ইংরেজপ্রেমী বানাই।
এছাড়াও আ'লা হযরত কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল, দেশ, রাষ্ট্রের কথা বলেন নি। সারাবিশ্বেই মুসলিম আছে। তাই তার থিওরি সারা বিশ্বেই প্রযোজ্য।
আর অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা বন্ধ হলে মাদক ও অন্যান্য হারাম বস্তুও আসা বন্ধ হবে। সুরক্ষিত থাকবে মুসলিম উম্মাহ। কি চমৎকার পন্থা। 'ফেড্রিক লিস্ট' একজন প্রখ্যাত জার্মান অর্থনীতিবিদ। তিনিও আ'লা হযরত এঁর এই নীতিকে স্বীকার করেছেন।
ইসলামী বিজ্ঞানের প্রয়োগ:
এ পয়েন্টা ভিন্ন। ভাবছেন অর্থনীতির সাথে এসবের কি সম্পর্ক। এখানে আ'লা হযরত এঁর অনন্যতা। যেখানে আমাদের চিন্তা শেষ। সেখানে তাঁর শুরু।
আ'লা হযরত চাইছিল মুসলিমরা শিক্ষিত হোক। যাতে আমরা সভ্যতার সাথে এগুতে পারি। শিক্ষার অনগ্রসর আমাদের ডুবাচ্ছিল।
যাকগে, মূল কথা এটা না। আ'লা হযরত এঁর ব্যাখ্যা ভিন্ন। আ'লা হযরত চাইছিলেন, অর্থনীতি বিষয়টি যেন ইসলামের মৌলিক একটি শাখায় পরিণত হয়। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান যেন এতে সর্বোচ্চ প্রভাব রাখে। ফলে মুসলিমরা হবে অর্থনৈতিক সচেতন।
আজ কষ্ট হয়। সভ্যতা আজ পশ্চিমাদের। তারা যাই বকে, আমরা শিখি। নিজের ইতিহাসও আমরা জানি না।
এই ইতিহাসের এক অদেখা অধ্যায়ের নাম আ'লা হযরত ইমাম আহমাদ রেযা খান। তিনি ডাকছেন দু'হাত বাড়িয়ে। বলছেন তাঁকে আবিষ্কার করতে।

হে নতুন দিনের নব সেনানী!

ওঠ!

ফিরিয়ে আনো এই ব্যথিত সত্তার প্রাপ্য অধিকার,
বেরেলি থেকে সে তোমায় ডাকে বারবার!

৩য়পর্ব

হাফেয কাযিম আলি খান। ইমাম আ'লা হযরত এঁর পূর্বপুরুষ। তিনি জায়গীর পেয়েছিলেন। পুরষ্কার হিসেবে। জমিদারী তো বুঝি আমরা। বৃটিশরা এ প্রথা চালু করে। তেমনি জায়গীর ছিল মোঘলদের সৃষ্টি। জায়গীর অবশ্য আকৃতিতে বড়। কয়েকটি জমিদারী নিয়ে একটি জায়গীর হবে।
আ'লা হযরত এঁর পূর্বপুরুষ সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাবাহিতে ছিল। আর আওরঙ্গজেব মোঘলদের একমাত্র বাদশা। যাকে 'ওয়ালিয়াল্লাহ' বলা হত। পূণ্যবান শাসক।
আ'লা হযরত'দের জায়গীর ছিল 'বুদাউন' জেলার 'কারটাউলি' গ্রাম। বর্তমান বেরেলি শরীফ থেকে ৩৮ কি.মি. দূরে। পুরো গ্রামটাই তাঁদের ছিল ১৯৭৮ অবধি। চল্লিশ কি.মি. জুড়ে ছিল তাদের ভূ-সম্পদ। সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব। এক জেলা থেকে আরেক জেলা। সে যুগে ভারতের গ্রাম বলতে এটাই বুঝাত। ভাবা যায়, ৪০ কি.মি.!
যা-হোক, লেখার উদ্দেশ্য সম্পত্তি না। কিন্তু কি বিশাল সম্পত্তি তাই না। অবাক তথ্য কি জানেন? এত সম্পত্তির পরেও আ'লা হযরত এঁর ওপর যাকাত ফরয হয় নি। মানে যাকাত পরিমাণ সম্পদ কখনো ছিলই না। আজব না!
আ'লা হযরত এঁর ভাই-বোনদের মাঝে সম্পদ ভাগ হল। আ'লা হযরত ও পেলেন। এবং সেদিনেই তাঁর সমস্ত কিছু শ্রদ্ধেয়া মায়ের নামে লিখে দেন। নিজে একদম শূণ্য।
আ'লা হযরত কে কারণ জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেন, আমি তো চালিয়ে নিব। যেমন করে হোক। কিন্তু আমার মা বিধবা। তিনি কি করবেন? তিনি যেন অসহায় বোধ না করেন। এবং কারো ওপর বোঝা না হন। তাই এমনটি করলাম। এছাড়া মায়ের সম্পদে তো সন্তানের অধিকার আছেই। কখনো লাগলে চেয়ে নিব।
এরপর শুধু বই কেনার জন্য তিনি মায়ের কাছে অর্থ নিতেন। এবং জানা যায় দান-খয়রাতের ক্ষেত্রে শাম্মে হুদা ইমাম জয়নুল আবেদিন আলাইহিস সালাম এঁর সুন্নাত অনুসরণ করতেন। গভীর রাতে অসহায়ের দরজায় অর্থ রাখতেন। এবং নিয়মিত রাখতেন।
এমনিতে তো ছিল না কিছুই। যা আসত বিলিয়ে দিত। যাকাত ফরয হয় কিভাবে!

'আরব্য উপন্যাস' লিখছি না। মহামানবদের জীবনী এমনি। মনে হয় কোনো মহাকব্যের অংশ।
যা-হোক, মূল কথায় আসি। একটা জিনিষ খেয়াল করেছেন? খুব সুক্ষ্ম। অনুমান করুন। আচ্ছা বলছি, বিষটি হচ্ছে 'নারী অধিকার'।
হ্যাঁ, নারী অধিকার। ১,৪০০ বছর আগে। মদিনায় সে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। মদিনা-মুনিব (দ) সর্বোপ্রথম বলেন, নারীর পদতলে জান্নাত। ইসলামই গর্তচাপা থেকে নারীকে উঠিয়েছে। শিশুকন্যার চিৎকারে তখন প্রকম্পিত হত খেজুরপাতা। লুন্ঠিত হত মানবতা। ইসলাম তা ঠেকিয়েছে। মদিনা-মুনিব (দ) দুধমায়ের জন্য নিজের পবিত্র রুমাল বিছালেন। সাহাবারা অবাক হয়েছেন। এত সম্মান একজন নারীকে!
আ'লা হযরর তো ভিন্ন কেউ নন। বিচ্ছিন্ন কেউ নন। তিনি তো মদিনা'র মাইলফলক। তাই তিনি আর মদিনা ভিন্ন হবে কেন!
- তোমার কাছে একশ টাকা আছে। এ টাকা বাবা-মায়ের জন্য। তবে পঁচিশ টাকা বাবাকে দাও। বাকি ৭৫ টাকা দাও মাকে।
- বাবা এবং মা একসাথে পানি চাইলো। আগে মাকে পানি দাও। এরপর বাবাকে।
- বাবা-মা সফর থেকে এসছেন। পা চিপতে চাও। সেবা করতে চাও। তবে জেনে রাখো, অধিকার আগে মায়ের।
কথাগুলো আ'লা হযরত এঁর। এরচে অনন্য অধিকার আর কি হতে পারে? এই নৈতিকতা, সম্মানবোধ হল একটি দরজা। যা বিকশিত করে মানুষের মননে নারীর সম্মান, মমত্ব, মর্যাদা।
ইমাম আ'লা হযরত এঁর পাঁচ সম্মানিত কন্যা ছিলেন। সকলেই যুগ শ্রেষ্ঠা, অনন্যা। আলেমা ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ তাঁদের ছিল।
এ থেকে কি বুঝা যায়? ইমাম আ'লা হযরত নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে আপোস করেন নি। তিনি নিজের মেয়েদের পড়িয়েছেন। শরীয়ত সমৃদ্ধ করেছেন।
অথচ, ভারতেরই কেউ কেউ নারীশিক্ষাকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। ইংরাজি শিক্ষাকে হারাম বলেছিল। এদের লক্ষ্য ছিল মুসলিমদের পিছিয়ে দেয়া { আল্লাহ ও তাঁর প্রেমাষ্পদ (দ) ভালো জানেন}।
একটু ভাবুন। ভাবুন আ'লা হযরত কে নিয়ে। জানুন, পড়ুন। কতটা ডাইনামিক ছিল এ মানুষটা। কতটা মানবিক ছিল। কতটা সৎ ও নির্লোভ ছিল।
তাঁকে গালি দিয়েন না প্লিজ। আমাকে বকেন। গালিবের আঠারো গোষ্ঠী উদ্ধার করেন। গালিব তো কিট তুল্য। মনে রাখবেন, আ'লা হযরত কে গালি দিলে, গালিটা লাগে মদিনা'র বুকে। সন্তানকে বকলে পিতাও আঘাত পান।
ইমাম আ'লা হযরর না থাকলে 'ওহাবী' চিনতাম না। ওহাবী শব্দটা তাঁর আবিষ্কার। ওহাবী না চিনলে মুসলিম থাকতাম কিনা খোদা মালুম। তিনি আমাদের বাঁচিয়েছেন। ইমান রক্ষা করেছেন। এ ঋণ কি অস্বীকার করতে পারবেন!
আল্লাহ আমাদের কৃতজ্ঞ করুক। কৃতজ্ঞ হবার ক্ষমতা দিক। যাতে আমরা ঋণবোধ করি আমাদের এহসানের ওপর। যে এহসান করেছেন, আমার হৃদয়ের বাদশা। সেই বেরেলির শাহেনশাহ, ইমাম আ'লা হযরত আহমাদ রেযা খান।

৪র্থ-পর্ব


পিএইচডি তো বুঝি। ধরুন প্রাতিষ্ঠানিক পড়া শেষ। মাস্টার্স বা স্নাতক করলেন। কিন্তু আরো জানতে চান। কিন্তু কি পড়বেন? এখানেই পিএইচডি। জ্ঞান-পিপাসা মেটানোর সন্ধান।
মাস্টার্স অবধি আপনি একাডেমি মুখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাই পড়াবে পড়তে হবে। আপনি বাধ্য। কিন্তু পিএইচডিতে আপনি স্বাধীন। একটি বিষয় পছন্দ করবেন। যা আপনার সাধ্যের মধ্যে। সাধ্য বলতে ক্ষমতা বুঝিয়েছি। দর্শনের কেউ নিশ্চই রসায়নে পারদর্শী নয়।
যা-হোক, সে বিষয়ে গবেষণা করবেন। নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন। অভিসন্দর্ভ তৈরী করবেন। এই গবেষণায় আপনাকে একজন গাইড করবে। নির্দেশনা দিবে। যিনি আপনার সিনিয়র। আপনার থেকে ভালো বুঝেন। তাঁর নির্দেশনা ছাড়া চলা দুষ্কর। এরপর আপনার গবেষণা নিয়ে বোর্ড বসবে। তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। আপনার কাজ সঠিক কিনা। সঠিক হলে আপনি ডক্টোর। সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।
মূল কথায় আসি। প্রায়ই একটা কথা শুনি। ইসলাম ইজ দা ফুললি কোড অভ লাইফ। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এখন প্রশ্ন জীবন মানে কি? কখনো ভেবেছেন? বিশাল ফিলোসোফিলাক প্রশ্ন। আমার কাছে, জীবন মানে বিকাশ। বীজ অঙ্কুরিত না হলে কখনোই গাছ হবে না। গাছ না হলে ফুল-ফল-ছায়া আসবে না। এটাই বিকাশ।
একই ভাবে, মানুষ নিজেকে বিকশিত না করলে, সে পঁচনশীল বস্তু ছাড়া কিছুই না। বীজ যেমন পঁচে যায়। কেউ খোঁজও রাখে না।
এখন মানুষের বিকাশ কেমন? মানুষ জন্মায়। সমাজ তাঁকে শিক্ষিত করে। নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবতা ইত্যাদি যোগান দেয়। চারা গাছে যেমন সার-পানি দেয়া হয়। এসব গুণ না থাকলে মানুষ শুধু পশু। পশু এবং মানুষ উভয়ে দেহধারী। উভয়ে পঁচনশীল।
সমাজের নৈতিকতা, মানবতা, মূল্যবোধ আসে কোত্থেকে? ধর্মদর্শন থেকে। মুসলিম সমাজে ইসলাম থেকে। ইসলাম সমাজকে স্কুল বানায়। স্কুলের আইন আছে। আইনের বাহিরে যাওয়া নিষিদ্ধ। ঠিক আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত। এই আইনই হচ্ছে শরিয়া, শরিয়ত। শরিয়ত জীবনের সকল জায়গায় মানুষকে মানুষ হতে নার্সিং করে।
এখন প্রশ্ন, জীবন কয়টা? খাওয়া-ঘুমা-বেঁচে থাকাই কি জীবন? হালাল-হারামের পার্থক্যই কি জীবন? না, জীবন দুটো। ইহকাল এবং পরকাল। ইহকালের জীবনে তো শরীয়ত গাইড করে। কিন্তু পরকালে!
এ পরকাল বা অপার্থিব জীবনের জন্যই মারেফত। শরিয়ত আমাদের মানুষ বানায়। মাস্টার্স পাস করায়। আর পিএইচডি বা জ্ঞানের উন্মুখ রাজ্যে যাওয়ার দরজাই মারেফত।
মাস্টার্সের আগে স্বাধীনতা নেই। কারণ আপনি শিখছেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আপনার তখনো হয় নি। সিদ্ধান্তের ক্ষমতা এলেই স্বাধীন। কারণ শিশুর হাতে আগুন দিলে সে নিজেই পুড়বে। আর স্বাধীনতা তখনি আসে, মানুষ যখন স্রষ্টার সান্নিধ্য পায়। সীমাবদ্ধ সৃষ্টি থেকে অসীম স্রষ্টার স্বাদ পাওয়া। যা মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য।
পিএইচডি করতে গাইড লাগে। মারেফাতে চলতেও গাইড লাগে। এই গাইড হচ্ছেন, মুর্শিদ বা পীর। অবশ্য পিএইচডি বিভিন্ন বিষয়ে হয়। মারেফাতের বিষয় একটি। স্রষ্টাকে পাওয়া। তাহলে মারেফাতে কি গবেষণা করা হয়? মারেফাতে গবেষণা করা হয় পথ, পন্থা, উপায়। কারণ একেক জনের জন্য পথ ভিন্ন। অসীম স্রষ্টা একেক ভাবে ধরা দেয় একেক জনের কাছে।
বলা হয়, সমস্ত মানুষ যত নি:স্বাস নিয়েছে, নিচ্ছে, নিবে - ঠিক তত সংখ্যক পথ আছে স্রষ্টাকে পাওয়ার।
মোটকথা, শরিয়ত মানুষকে পশু থেকে মুমিন বানায়। স্কুল যেমন মূর্খকে শিক্ষিত করে। আর মারেফাত মানুষকে জ্ঞান বা লক্ষ্যের চূড়ান্তে নিয়ে যায়।
ভার্সিটিতে ফ্যাকাল্টি থাকে। এক ফ্যাকাল্টিতে বহু বিষয়। বহু বিষয়ে অসংখ্য পিএইচডি। তেমনি মারেফাতেও ফ্যাকাল্টি বা অনুষদ থাকে। একে বলা হয় তরিকা (Sufi Order)। একটি তরিকায় ভর্তি হন। বায়াত গ্রহন করুন। একটি বিষয় নিন। গবেষণা করুন। নিজেকে জানুন। নিজের পথ চিনুন। স্রষ্টাকে চিনবেন। আপনার গবেষণা সঠিক হলে ডিগ্রি পাবেন। মারেফতে এ ডিগ্রির নাম খেলাফত।
এবার মূলেরও মূল কথা। একটি খেলাফত যথেষ্ট সত্যায়নের জন্য। কেউ যে স্রষ্টার সান্নিধ্য পেয়েছেন এটা তারই প্রমাণ। কিন্তু কেউ যদি একে একে তেরটা বা তারো বেশি খেলাফত পায়, তবে? তাহলে বুঝতে হবে স্রষ্টাকে সে ১৩ বার পেয়েছেন। তেরটা পিএইচডির মত। ভার্সিটির পিএইচডি না। অসীম স্রষ্টাকে পাওয়ার পিএইচডি।
ইমাম আ'লা হযরত একে একে ১৩ টি তরিকার খেলাফত প্রাপ্ত। তরিকাগুলো হচ্ছে :
1) কাদেরিয়া বারাকাতিয়া জাদীদাহ
2) কাদেরিয়া আবাইয়াহ কাদীমাহ
3) কাদেরিয়া আহদাইয়াহ
4) কাদেরিয়া রাজ্জাকিয়াহ
5) কাদেরিয়া মুনাওয়ারিয়াহ
6) চিশতিয়া নিযামিয়াহ
7) চিশতিয়া সাবরিয়াহ
8) নকশাবন্দি উলাইয়াহ (আবুল উলাইয়া)
9) নকশাবন্দি সিদ্দিকিয়া
10) সোহরাওয়ার্দিয়া কাদীমাহ
11) সোহরাওয়ার্দাহ জাঈদাহ
12) সিলসিলা এ বাদী'আহ
13) সিলসিলায়ে মানামিয়াহ
বেশির ভাগ তরিকায় আ'লা হযরত বায়াত ছিলেন না। কিন্তু সে তরিকতের মাশায়েখগণ উপহার স্বরুপ খেলাফত দিয়েছেন। কবি নজরুল ডক্টোরেট করেন নি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'ডি. লিট' উপাধি দেয়। ডক্টোর অভ লিটারেচার। কারণ তার কর্ম সে যোগ্যতা রাখে।
একইভাবে আ'লা হযরত সব সিলসিলায় বায়াত হন নি। কিন্তু তাঁর কর্ম সব ছাপিয়ে গিয়েছিল। তাঁর যোগ্যতার কারণেই তাঁকে খেলাফত উপহার দেয়া হয়েছে।
শেষ কথা। ভাবুন তো, এই ১৩ জন মাশায়েখ কি মূর্খ ছিলেন। তাঁরা কি জানতেন না, আ'লা হযরত কুফরি করেছেন। কেউ কুফরি করলে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায় কিভাবে? আল্লাহ পর্যন্ত না পৌঁছালে খেলাফত পায় কিভাবে? তখন তো বাপের ছেলে, তাই খেলাফত এমন ছিল না।
জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
মালিক আমাদের বুঝার শক্তি দিক। ধৈর্য দিক। হেদায়ত দিক। ধন্যবাদ।
৫ম-পর্ব

১৫০ বছর আগে। বিমান ছিলনা। না ছিল মোবাইল, টিভি। ইন্টারনেট কল্পনাতেও আসে নি। তখন তথ্য দ্রুত ছড়াতো না। বছরের পর বছর যেত। শতাব্দির পর শতাব্দী। ধীরে ধীরে প্রচার পেত।
কিন্তু ইমাম আ'লা হযরত তো ভিন্ন। তাঁর কর্মজীবন ৫৮ বছর। এ সময়েই তিনি বিশ্বে ছড়িয়েছেন। এ মাথা থেকে ও মাথা। শুধু পাক-ভারতে নয়। শতাব্দী থেকে শতাব্দী লাগে নি। আসুন দেখি কিভাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা। মহাসাগর পেরিয়ে ওপাড়ে। ভারতের বিপরীতে প্রায়। দূরত্ব, ৮,৮৭৩ কি.মি.। ৫,৩১৩ মাইল। ৪,৭৯১ ন্যাটিক্যাল মাইল। বর্তমানে বিমানে ৯ ঘন্টা ৫১ মিনিট লাগে। যদি বিমান ৯০০ কি.মি. প্রতি ঘন্টা উড়ে। তাও বিরতিহীন ভাবে। ১০০ কি.মি. গতিতে গাড়ি চালান। ৩ দিন ১৭ ঘন্টা লাগবে। একজন প্রশিক্ষিত, সুস্থ্য মানুষ দিনে ৩০ কি.মি. হাঁটতে পারে। সে গণিতে ২৯৬ দিনের হাঁটা পথ। ৯ মাস ২০ দিন প্রায়। এ সময়ে পুরো বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
যা-হোক, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে ১১১ টি প্রশ্ন এসেছিল বারেলি শহরে। ভারতের উত্তর প্রদেশে। চিঠিতে ভরে। যা 'ফতোয়ায়ে আফ্রিকা' নামে পরিচিত। সেখানের মানুষ ইমাম আ'লা হযরতের কাছে সমাধান নিতেন। ফতোয়া নিতেন। ভাবা যায়!
পর্তুগাল চিনেন? আপনার আশপাশে না। ভূগোলের অন্যপ্রান্তে। বারেলি থেকে ৭,৮৭৮ কি.মি. প্রায়। বিমানে সোয়া আট ঘন্টা। রাস্তাপথে ৩ দিন ২০ ঘন্টা। হাঁটলে আট মাসের বেশি। ২৬২ দিন। তিনটি চিঠি এসেছিল। এবার ভাবুন, আ'লা হযরত এঁর পরিচিত কোথায় পৌঁছেছিল!
বার্মা বা মিয়াননার। ১,৮১১ কি.মি.। রাস্তাপথে ১০০ কি.মি. গতিতে ১৮ ঘন্টার বেশি। দু'মাসের বেশি হাঁটাপথে।
পাকিস্থান। ১,০০৩ কি.মি.। গাড়িতে ১০ ঘন্টার বেশি। লম্বা জার্নি করলে বুঝবেন। দশ ঘন্টা মানে কি। হাঁটলে ৩৪ দিন।
আফগানিস্তান। ১,২৭৬ কি.মি.। গাড়িতে ১৩ ঘন্টা। ৪২ দিন হাঁটলে।
বাগদাদ শরীদ, ইরাক। ৩,৩৮০ কি.মি. বিমানে সোয়া তিন ঘন্টা। রাস্তায় ৩৪ ঘন্টা। হাঁটাপথে ১১২ দিন। তিন মাস ২২ দিন।
মজার তথ্য কি জানেন? আমাদের বাংলাদেশ থেকেও চিঠি গিয়েছে। সমাধান চাওয়া হয়েছে। গুনেগুনে ৭৩ টি প্রশ্ন গিয়েছিল। বাংলা থেকে বারেলি কম দূরত্ব না। সরল রেখায় ১,২১০ কি.মি. ঘুরায় প্যাচায় না। টানা চিল্লা লাগবে হেঁটে পৌঁছালে। মানে চল্লিশ দিন।
একটা মানচিত্র আঁকুন। বারেলি শহর কে চিহ্নিত করুন। এরপর বাকি দেশগুলোতেও চিহ্ন দিন। কি দেখবেন জানেন? দেখবেন বারেলি মাঝখানে। চারদিক থেকে চিঠি আসছে। চিঠির সাথে আশা, প্রত্যাশা, স্বপ্ন। নিজের অজানাকে জানার তৃষ্ণা। একজন মানুষের কাছে পুরোবিশ্বের মানুষের জিজ্ঞাসা।
ঠিক যেমন মৌচাক। রাণী মৌমাছি মাঝে থাকে। তার চারদিকে গড়ে ওঠে সম্রাজ্য। ইমাম আ'লা হযরত এঁরও সম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল, উঠেছে। জ্ঞানের সম্রাজ্য। প্রজ্ঞার সম্রাজ্য। মদিনাপ্রেমের সম্রাজ্য।
আপনাকে স্বাগতম সে সম্রাজ্যে। প্রেমরাজ্যে।

Featured post

সালাতুল ইস্তেখারা নামাজের বর্ননা।।

  সালাতুল ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম Madina Madina Madina   আমরা এই নামাজ কেন পড়ব?  কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে, অর্...